অন্যান্য

শবে মেরাজের নামাজের নিয়ম, নিয়ত, রোজা ও ফজিলত – জানুন

শবে মেরাজের নামাজের নিয়ম , নিয়ত - ভিডিওসহ

মুসলিমদের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত পালন করার রাতগুলোর মধ্যে অন্যতম একটি রাত হচ্ছে সবে মেরাজ। আপনি কি শবে মেরাজের নামাজের নিয়ম সম্পর্কে জানতে চান? শবে মেরাজ আসলে উদ্বিগ্নের সৃষ্টি হয়। এবং নামাজ ও বিভিন্ন আমাল সম্পর্কে আমাদের মাথায় ঘুরপাক খেতে থাকে ।

শবে মেরাজ রাতে মুসলমানরা নফল নামাজ আদায় করেন এবং বিভিন্ন ধরনের দোয়া পাঠ করেন। কিন্তু কিভাবে শবে মেরাজের নামাজ পড়তে হয় এবং এর নিয়ম কি? শবে মেরাজের কি রোজা রাখতে হয়? এ সকল বিষয়গুলো সম্পর্কে অনেকেই অবগত নন। তাই শবে মেরাজের নামাজের নিয়ম, নিয়ত ও রোজা  সম্পর্কে আপনাদের কে জানাতে এসেছি। আপনারা যদি সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ে থাকেন তাহলে অবশ্যই শবে মেরাজের সম্পর্কে জেনে নিতে পারবেন।

এখানে আমরা আলোচনা করব শবে মেরাজে নামাজ আছে কি নেই ? যদি থাকে তাহলে কত রাকাত ? এবং শবে মেরাজের ফজিলত কি? ইত্যাদি । নামাজ সম্পর্কে জানার আগে আমাদের জানতে হবে শবে মেরাজ কি ? তাই আগে শবে মেরাজ কি ? এ নিয়ে আলোচনা করা হলো ।

শবে মেরাজের নামাজের নিয়ম

আধুনিকতার সাথে তাল মিলিয়ে চলার পথে আমরা ইসলামের অনেক ইতিহাস বলতে চলেছি। আমরা এখন পর্যন্ত ঠিকভাবে জানি না শবে মেরাজ কেন পালন করা হয় এবং সবে মেরাজ দিবাগত রাতে ইসলামিক ইতিহাসের কি এমন ঘটেছিল। এক কথায় হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শবে মেরাজ দিবাগত রাতে মহান আল্লাহতালার আদেশে সাত আসমানে মহান আল্লাহতালার সাথে সাক্ষাত করতে যান এবং বান্দাদের জন্য উপহারস্বরূপ পাঁচ ওয়াক্ত ফরজ নামাজ নিয়ে আসেন। যেহেতু শবে মেরাজ একটি বিশেষ দিন সেহেতু এই দিনের দিবাগত রাতে বিশেষভাবে ইবাদত পালন করা হয়।

ইসলামিক ইতিহাসের বিশেষ দিনগুলোতে নফল নামাজ আদায় করা হয়। ঠিক তেমনি সবাই মেরাজের নফল নামাজ আদায় করা হয়। সাধারণত আমরা যেভাবে দুই রাকাত করে নফল নামাজ আদায় করে থাকে ঠিক সেভাবেই শবে মেরাজের দুই রাকাত নফল নামাজ আদায় করে থাকে।

অনেকে মনে করেন যে সবে মেরাজের জন্য বিশেষভাবে ১২ রাকাত নফল নামাজ আদায় করতে হয় কিন্তু এটি সঠিক নয়। আপনি চাইলে এর কম অথবা বেশি নফল নামাজ আদায় করতে পারেন। ১২ রাকাত নামাজ নির্ধারিত করতে হবে এমন কোন নিয়ম নেই।

শবে মেরাজের নফল নামাজ পড়ার নিয়ম হচ্ছে-

  • নফল দুই রাকাত করে নামাজের নিয়ত করতে হবে এবং আদায় করতে হবে।
  • প্রতি চার রাকাত নামাজ আদায় করা হয়ে গেলে মোনাজাত ধরতে পারেন।
  • বেশি বেশি জিকির করতে হবে।
  • নামাজের উপর পূর্ণ মনোযোগ দিতে হবে।
  • সাধ্য অনুসারে দান সদকা করতে হবে।
  • দোয়া পাঠ করতে পারেন।

সুতরাং আমরা সাধারণত নফল নামাজ যেভাবে অর্থাৎ যে নিয়মে আদায় করে থাকে ঠিক সেভাবেই সবে মেরাজের নফল নামাজ আদায়ের করা হয়।

শবে মেরাজের নামাজের নিয়ত 

শবে মেরাজের যেহেতু নির্দিষ্ট কোন নামাজ নাই। তাই এর কোন নির্দিষ্ট নিয়ত নেই। তবে যদি আপনি নামাজ পড়তে যান তাহলে অন্যান্য দিনের মতো নফল নামাজ পড়তে পারেন। এই হিসেবে আপনি নফল নামাজ পড়ার নিয়ত করতে পারেন ।

যেকোনো নামাজ আদায় করার পূর্বে অবশ্যই নিয়ত করতে হয়। চাইলে মনে মনে মহান আল্লাহ তাআলার নিকট নামাজের নিয়ত করতে পারেন অথবা নামাজের নিয়তের দোয়া পাঠ করে নামাজে নিয়ত করতে পারেন। নিয়ত করা মূলত হচ্ছে ইচ্ছা পোষণ করা। সুতরাং আপনি যে নামাজ পড়বেন এবং এর জন্য ইচ্ছা পোষণ করেছেন, এটিই হচ্ছে মূলত নিয়ত। আপনারা যাদের শবে মেরাজের নামাজের জন্য সহজেই নিয়ত করতে পারেন তার জন্য বাংলা উচ্চারণে সবে মেরাজের দুই রাকাত নফল নামাজের নিয়ত নিম্নে উপস্থাপন করা হলো-

বাংলা উচ্চারণঃ নাওয়াইতুআন উছাল্লিয়া লিল্লাহে তা’আলা রাক’আতায় ছালাতি লাইলাতিল মে’রাজ মুতাওইয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল কা’বাতিশ শারিফাতি আল্লাহু আকবার।

শবে মেরাজের নামাজের রোজা

আপনারা অনেকে ভাবছেন যে এই শবে মেরাজের রোজা কয়টি? যেহেতু শবে বরাতের রোজা রাখা হয়, ঈদু মিলাদুন্নবী রোজা রাখা হয় এবং সেই সাথে প্রত্যেক মাসে তিনটি রোজা রাখা হয়। এ সকল রোজা গুলো মূলত নফল ইবাদাত হিসেবে গণ্য হবে। তাই আমাদের সকলের উচিত সবার আগে ফরজ ইবাদাত গুলো পালন করে নফল ইবাদাত পালন করা। সাধারণত চন্দ্র মাসের ১৪ বা ১৫ তারিখ রোজা রাখা ফলে বিশেষ ফজিলত পূর্ণ সোয়াব পাওয়া যায় সেহেতু রজব মাসের রোজা হিসেবে আপনারা নফল রোজা রাখতে পারেন।

কিন্তু শবে মেরাজকে উপলক্ষ করে কোন রোজা রাখা যাবে না। তাই আপনারা সবাই মেরাজকে উল্লেখ করে শবে মেরাজের রোজা রাখতে পারবেন না তবে মাস হিসেবে রোজা রাখতে পারেন। এই সকল রোজা সমূহ নফল ইবাদত হিসেবে গণ্য করা হবে।

শবে মেরাজের নামাজ ও রোজা সম্পর্কে বড় বড় আলেমদের বক্তব্য:

অর্থাৎ শবে মেরাজে নামাজ ও রোজা আছে কিনা নাই ? এ ব্যাপারে বড় বড় ওলামায়ে কেরামরা  যে বক্তব্য দিয়েছেন সেগুলো নিম্নে বলা হলো :

নবী সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম থেকে বর্ণিত নয়  এ ধরনের কোন নামাজের কথা ও রোজার কথা  । পাশাপাশি সাহাবায়ে কেরাম থেকে এ ধরনের কোনো কিছু সঠিক ভাবে প্রমানিত নয় । এসব কিছু-ই মানুষের বানানো বিষয়।

এ ব্যাপারে দলিল : 

  1. আল্লামা ইবনে রজব হাম্বলী রহমাতুল্লাহ আলাইহি বলেন : রজব মাসের বিশেষ কোন নামাজ সহিহ ভাবে প্রমাণিত নয় (লাতায়িফুল মায়ারিফ , পৃষ্ঠা ১৬৪)
  2. বিখ্যাত মুহাদ্দিস হাফেজ ইবনে হাজার আসকালানী রহমতুল্লাহি আলাইহি  এ সম্পর্কে বলেন রজব মাসের মর্যাদা এবং এই মাসে রোজা রাখা এবং এই মাসের বিশেষ কোন রাত্রে নামাজের ফজিলত সম্পর্কে দলিল যোগ্য হাদিস নেই। এমনটা দৃঢ়তার সাথে আমার পূর্বে বলেছেন  ইমাম আবু ইসমাইল আল হারাওয়ী। আমরা তার থেকে সহীহ সনদে এমনটা বর্ণনা করেছি। (তাবয়িনুল আদাব বীমা ওয়ারাদা ফি শরহী রজব।পৃষ্ঠা: ২)
  3. হাফেজ ইবনে হাজার আসকালানী এখানে স্পষ্ট ভাষায় বলেছেন : যে রজব মাসের বিশেষ কোন রাতের ফজিলত সহি হাদিস দ্বারা প্রমাণিত নয়। সুতরাং আমাদের দেশে যেহুত ২৭ তারিখে শবে মেরাজ  হিসেবে  মনে করা হয়  করা হয় ।  তাই এই রাতের বিশেষ করে  কোন নামাজ প্রমাণিত নয় সহিহ হাদিস দ্বারা  ।
  4. শবে মেরাজের নামাজের নিয়ম সম্পর্কে যে  কথা বারো চান্দের ফজিলত নামক কিতাবে উল্লেখ আছে : এ সম্পর্কে হাফেজ ইবনে হাজার আসকালানী রহমতুল্লাহি আলাহি বলেন  এই সবকিছু জাল ।

রাসূল (সা:) ও সাহাবায়ে কেরাম শবে মেরাজ পালন করেছেন কিনা ?

রাসূল (সা:) ও সাহাবায়ে কেরাম রজব মাসের 27 তারিখে মেরাজ রজনী হিসেবে পালন করেছেন এ ব্যাপারে কোরআন ও হাদিস গবেষণা করার পর কোন কিছুই পাওয়া যায় না।

তাবে তাবেঈন থেকেও এ ব্যাপারে কোন কিছু পাওয়া যায় না। অতএব যে জিনিসটা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও সাহাবায়ে কেরাম ও তাবে-তাবেঈন পালন করেন নাই ইসলামী শরীয়তে সে জিনিসের কোন ভিত্তি নেই।

শবে মেরাজে করণীয়

এ রাতকে উপলক্ষ করে কোন ধরনের করণীয় বিষয় নেই। যদি এবাদত করতে চান তাহলে স্বাভাবিকভাবে অন্যান্য রাতের মত এবাদত করতে পারেন ও তাসবিহ তাহলিল পড়তে পারেন এবং পাশাপাশি নফল নামাজ পড়তে পারেন।

শবে মেরাজে বর্জনীয়

  •  এই রাতকে উপলক্ষ করে হালুয়া মিষ্টি বিতরণ করা যাবে না।
  • ফজিলত মনে করে কোন ধরনের নামাজ পড়া যাবে না।
  •  27 তারিখ ফজিলত মনে করে রোজা রাখা যাবে না।
  •  কোন ধরনের আনন্দ উৎসব করা যাবে।
  • এই রাতকে ফজিলত মনে করে গোসল করা যাবে না।
  • জাঁকজমক অনুষ্ঠান করা যাবে না।

মোটকথা :  মেরাজ উপলক্ষ করে শবে মেরাজের  বিশেষ নামাজের নিয়ম বা রোজা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম  থেকে বর্ণিত নয় ।

শবে মেরাজ পালন করা কি জায়েজ ?

শবে মেরাজ পালন করা জায়েজ নেই। বরং শবে মেরাজ কে ফজিলত মনে করে কোনো ধরণের রোজা ও নামাজ আদায় করা বিদআত।

শবে মেরাজের নামাজ কয় রাকাত ?

শবে মেরাজ উপলক্ষ করে যেহেতু কোন নামাজ নেই । অতএব নামাজ কত রাকাত এব্যাপারে কোন প্রশ্ন আসে না। অতএব আমাদেরকে সঠিক বিষয় জেনে আমল করতে হবে।

শবে মেরাজ ২০২৩ কত তারিখে ?

ইংরেজী তারিখ অনুযায়ী ২০২৩ সালে ১৮ ফেব্রুয়ারী রোজ শনিবার দিবাগত রাত্রে  শবে মেরাজ অনুষ্ঠিত হবে ।

আশা করছি আপনারা আমাদের সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে শবে মেরাজের নামাজের নিয়ম, নিয়ত ও রোজা সম্পর্কে জেনে নিতে পেরেছেন বিস্তারিতভাবে। মহান আল্লাহতালা সকল মুসলিমদেরকে এই ইবাদত পূর্ণরাতে ইবাদত করার তৌফিক দান করুক। আমিন। এছাড়া আপনারা যারা সবাই মেয়েরা সম্পর্কে আরও যে কোন তথ্য জানতে চান তাহলে অবশ্যই কমেন্টের মাধ্যমে জানাতে পারেন। জাযাকাল্লাহু খাইরান।

Related Articles

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

Back to top button