নোটিশ

পহেলা বৈশাখ কবে? পয়লা বৈশাখ কত তারিখ, ১৪ না ১৫ এপ্রিল?

বাঙালির বছরের সেরা বাংলা নববর্ষ। আর এই উৎসবকে ঘিরে বাঙালির মধ্যে থাকে নানা ধরনের আয়োজন। কিন্তু পহেলা বৈশাখ কবে? পহেলা বৈশাখ ইংরেজি কত তারিখ পালন হবে।  তা নিয়ে অনেকের মধ্যে বিভিন্ন ধরনের মতবাদ সৃষ্টি হচ্ছে। তাই আজ আমরা আপনাদের জন্য পহেলা বৈশাখের সকল তথ্য নিয়ে এবং পহেলা বৈশাখ কবে অনুষ্ঠিত হবে তা নিয়ে হাজির হয়েছি।

যেহেতু পহেলা বৈশাখ বাঙালির কাছে অন্য এক উৎসব। আর এই উৎসবের মধ্য দিয়ে বাঙালির গৌরব এবং বাঙালি পরিচয় ফুটে উঠে সেহেতু এই উৎসব বাঙালির কাছে অনেক গুরুত্বপূর্ণ এবং আনন্দের উৎস। তাছাড়া এই উৎসবকে নিয়ে বাঙালির মধ্যে থাকে নানা ধরনের জল্পনা কল্পনা। তাহলে চলুন শুরু করি আমাদের আজকের মূল বিষয় পহেলা বৈশাখ কবে।

পহেলা বৈশাখ কবে?

আমরা সকলেই জানি যে পহেলা বৈশাখ আমাদের বাঙালিদের অন্যতম একটি উৎসব। আর এই উৎসবকে ঘিরে আমাদের মধ্যে নানা ধরনের আয়োজন এবং আমাদের বাঙ্গালীর ঐতিহ্য ধরে রাখার জন্য বিভিন্ন ধরনের আচার-অনুষ্ঠান পালন করা হয়। কিন্তু পহেলা বৈশাখ কবে? এ নিয়ে অনেকের মধ্যে প্রশ্ন ঘুরছে। কারন আমরা বাঙালিরা প্রাতিষ্ঠানিক এবং দৈনন্দিন জীবনের সকল কাজে ইংরেজি মাসের তারিখ গুলো ব্যবহার করে থাকে।

তাই অনেকে বাংলা মাসের তারিখ এর হিসাব ঠিক মত মনে রাখতে পারে না। কিন্তু যেহেতু বাঙালির একটি উৎসব আর এবার দিনকে ঘিরে অনেক আচার-অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা করা হয় সেহেতু এই দিনটি আমাদের অবশ্যই জেনে নিতে হবে।তবে বাংলা মাসের সাথে ইংরেজি মাসের তারিখ একই রকম বা একই তারিখ হয় না। বাংলা মাসের প্রথম শুরু হয় ইংরেজি মাসের মধ্যে স্থান থেকে তাই অনেকে বাংলা এবং ইংরেজি মাসের মধ্যে গোলমাল করে ফেলেন।

আর সমস্যা থেকে উত্তরণের জন্য আমরা আপনাদেরকে জানাতে এসেছি পহেলা বৈশাখ কবে। পহেলা বৈশাখ ২০২৪ হচ্ছে ১লা বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ।  বাংলা মাসের কিছু কিছুদিন ৩১ দিন আবার কিছু কিছু দিন ৩০ দিনের হয়ে থাকে। সুতরাং বাংলা মাসের প্রথম মাসে বৈশাখ মাস এবং শেষ মাসে চৈত্র মাস। তাই সকলে বাংলা মাসের পহেলা বৈশাখের পহেলা নববর্ষ বা পহেলা বৈশাখ হিসেবে উদযাপন করে থাকেন।

পহেলা বৈশাখ ইংরেজি কত তারিখ ২০২৪

ইতিমধ্যে আমরা জেনে গেছি যে বাংলা মাসের সাথে ইংরেজি মাসের কোন মিল নেই। তাই যেহেতু বাঙালিরা তাদের দৈনন্দিন কাজে এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রে ইংরেজি তারিখ অনুসারে সকল কার্যক্রম পালন করে থাকে সেহেতু সকলে পহেলা বৈশাখ ইংরেজি তারিখ অনুসারে মনে রাখেন। কারণ ইংরেজি হচ্ছে আন্তর্জাতিক ক্যালেন্ডার। আর এই ক্যালেন্ডার কে কেন্দ্র করে দৈনন্দিন জীবনের সকল কার্যক্রম এবং শিক্ষা কার্যক্রম সহ অফিশিয়াল সকল কার্যক্রম প্রতিষ্ঠিত হয়।

যেহেতু পহেলা বৈশাখ অনুষ্ঠিত হয় বাঙালিদের কে কেন্দ্র করে সেহেতু পহেলা বৈশাখ অনুষ্ঠিত হয় বৈশাখ মাসের ১ তারিখে। আর বাংলা মাস শুরু হয় ইংরেজি মাসের মধ্য মাস থেকে। তাই ইংরেজি মাসের ১৪ই এপ্রিল হচ্ছে ১লা বৈশাখ অর্থাৎ পহেলা নববর্ষ বা নববর্ষ উৎসব। আরে নববর্ষ উৎসবকে ঘিরে নানা ধরনের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত করা হয়।

সুতরাং ১৪ই এপ্রিল ২০২৪ইং তারিখে ১লা বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ বা নববর্ষ উৎসব উদযাপন করা হয়।

পহেলা বৈশাখ কেন পালন করা হয়

এখন আপনাদের মনে প্রশ্ন আসতে পারে যে পহেলা বৈশাখ বাঙালিরা কেন পালন করেন? আর আমরা আপনাদের এ প্রশ্নের উত্তরটি নিয়ে এসেছি। কারণ পহেলা বৈশাখ হচ্ছে বাঙালির অন্যতম গৌরবময় এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। যে অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে বাঙালির সকল ইতিহাস তুলে ধরা হয় এবং বাংলাদেশের বাঙ্গালীদের অবস্থান সেই সাথে নতুন প্রজন্মকে বাঙালির বাঙালিত্ব জানানো হয়।

পৃথিবীতে বহু জাতির মানুষ বাস করে তার মধ্যে অন্যতম জাতি হচ্ছে বাঙালি। সকল জাতির মত করে বাঙালি জাতির কিছু নিয়ম রীতিনীতি রয়েছে। আর এই নিয়ম রীতিনীতি গুলো যুগের পর যুগ পালন হয়ে আসছে। যদিওবা এই নিয়ম-নীতিগুলো ধার্মিকতার দিক থেকে অনেকে পছন্দ করেন না বা ধার্মিকতার দিক থেকে তা জায়েয নয়। কিন্তু প্রত্যেক জাতির নিজস্ব একটি সাংস্কৃতিক অঙ্গন রয়েছে। আর সেই সাংস্কৃতিক অঙ্গনকে ধরে রাখার জন্য প্রত্যেক বছর একটি বিশেষ দিনে বিশেষ ভাবে পালন করা হয়।

ঠিক তেমনি যেমন করে ইংরেজি নববর্ষ পালন করা হয়, বাংলা নববর্ষ পালন করা হয়। বাংলা নববর্ষ বৈশিষ্ট্য হচ্ছে বাংলার সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য তুলে ধরা। সকল বাঙালিরা সকাল থেকে রাত পর্যন্ত তাদের নিজস্ব সাজে সজ্জিত হয় এবং সারাদিন ব্যাপী বিভিন্ন আচার-অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করে থাকেন। লাল, সাদা, হলুদ, কমলা এবং বাসন্তী কালারের নিজেদেরকে শুদ্ধ করে থাকে সকল ছেলে এবং মেয়েরা। মেয়েরা শাড়ি পড়ে থাকে একদম বাঙালি যেভাবে শাড়ি পড়ে থাকে ঠিক সেভাবে। আর ছেলে পাঞ্জাব পরিধান করে থাকে।

পহেলা বৈশাখের দিন সকালবেলা ইলিশ-পান্তা সকলের মঙ্গল শোভাযাত্রায় অংশগ্রহণ করে থাকে। যেহেতু পহেলা বৈশাখে ইলিশ পান্তা খাওয়া হয় সেহেতু পহেলা বৈশাখে কেন্দ্র করে ইলিশের দাম অনেকাংশে বৃদ্ধি পেয়ে যায়। এরপর বাঙালিরা তাদের সাংস্কৃতিক অঙ্গনের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করে আর সেই অনুষ্ঠানগুলোতে নাচ, গান, আবৃতি সহ নানা ধরনের অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে।

তাছাড়া পহেলা বৈশাখে কেন্দ্র করে বিভিন্ন জায়গায় মেলা বসে। আর এই সকল মেলাতে বাঙালির ঐতিহ্যের বিভিন্ন ধরনের পুরাতন আমলের সরঞ্জাম এবং নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস গুলো পাওয়া যায়। যে সকল জিনিসপত্র যুগের কারণে এখন বর্তমানে ব্যবহার করছে না সে সকল জিনিসপত্র মেলায় পাওয়া যায়। নতুন প্রজন্মের ছেলেমেয়েরা এইসব জিনিস দেখে নিজেদেরকে বাঙালির ইতিহাস এর সাথে পরিচয় করিয়ে নেয় এবং সকলে জেনে নেয় যে তাদের পূর্বপুরুষেরা এই সকল জিনিস ব্যবহার করতেন। তাছাড়া মেলার অন্যতম আকর্ষণীয় জিনিস হচ্ছে মেয়েদের কাচের চুড়ি বা রেশমি চুড়ি।

সুতরাং পহেলা বৈশাখ পালন করার মূল কারণ হচ্ছে বাঙালির একটি অন্যতম সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এটি। এছাড়াও পহেলা বৈশাখ বা বৈশাখ-নববর্ষ বাঙালির সকল ইতিহাস পুনরুত্থান হয় এবং বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজনের মাধ্যমে বাঙালির ইতিহাস কে জাগ্রত করা হয়। নতুন প্রজন্মের কাছে বাঙালিকে বাঙালির ইতিহাস পরিচয় দেয়ার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দিন হচ্ছে পহেলা বৈশাখ।

হালখাতা অনুষ্ঠান

আমরা অনেকে হালখাতা অনুষ্ঠান এর কথা শুনেছি। কিন্তু এই হালখাতার অনুষ্ঠান কিতা আমরা এখনও অনেকে জানিনা। কারণ বর্তমান প্রজন্মের কাছে এই হালখাতা অনুষ্ঠানটি একদম নতুন একটি অনুষ্ঠান বলে মনে করেন। কারণ বর্তমান যেহেতু সবকিছু ডিজিটালাইজেশনের মাধ্যমে সংঘটিত হয় সেহেতু এই হালখাতা এখন আর বেশি ব্যবহার করা হয় না।

তবে কিছু কিছু বাঙালিরা আছেন যারা এখনো এই রীতিনীতি মেনে চলেন যে প্রত্যেক পহেলা বৈশাখের দিন হালখাতার অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত করা হয়। বিশেষ করে যারা পুরান ঢাকায় অবস্থান করেন এবং পুরান ঢাকার ব্যবসায়ীরা রয়েছেন তারা এই হালখাতার অনুষ্ঠান পালন করে থাকেন।

হালখাতার অনুষ্ঠান পালন করে থাকেন ব্যবসায়ীরা। আমরা সকলেই জানি ব্যবসায় একটি হিসাব বিবরণী প্রস্তুত করা হয়। আর এই বাৎসরিক হিসাব বিবরণী হতে বুঝা যায় ব্যবসার অবস্থান কোথায় রয়েছে। তাই কিছু কিছু ব্যবসায়ীরা এখন পর্যন্ত বাংলা মাস কে কেন্দ্র করে ব্যবসা এর কার্যক্রম চালিয়ে যায়। আর তাই তারা পহেলা বৈশাখ বা নববর্ষের দিনে সকাল বেলা হালখাতার অনুষ্ঠান পালন করে এবং সকলে মিষ্টিমুখ করে থাকে।

হালখাতা মূলত হচ্ছে ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান একটি নতুন খাতা উদ্বোধন করা। যেখানে ব্যবসা এর সকল বিবরণী লেখা থাকে এবং পুরনো খাতার সকল হিসাব সমাপ্তি করে নতুনভাবে হালখাতা খুলে নতুন বছরের হিসাব শুরু করেন। আর এই অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে সকলের মধ্যে ভ্রাতৃত্ব বজায় থাকে এবং মিষ্টিমুখ করে থাকেন। সুতরাং বাঙালি ব্যবসায়ীদের কাছে হালখাতার অনুষ্ঠান হচ্ছে অন্যতম একটি অনুষ্ঠান।

আশা করছি আপনারা আমাদের এই আর্টিকেল থেকে পহেলা বৈশাখ কবে? পহেলা বৈশাখ ইংরেজি ২০২৪ সালের কত তারিখ তা সম্পর্কে জানতে পেরেছে এবং ২০২৪ইং সালে কত তারিখে পহেলা বৈশাখ উদযাপন করা হবে তা জানতে পেরেছেন। এবং ব্যবসায়ীদের প্রধান উৎসব হালখাতা সম্পর্কে জানতে পেরেছেন। আপনারা যদি পহেলা বৈশাখ বা নববর্ষ সম্পর্কিত অন্যান্য তথ্য জানতে চান তাহলে আমাদেরকে কমেন্ট করে জানাতে পারেন। ধন্যবাদ।

Related Articles

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

Back to top button