২৬ শে মার্চ কবিতা বা স্বাধীনতা দিবস কবিতা: বাংলাদেশ স্বাধীনতা দিবস পালন করা হয় ২৬ শে মার্চ। এই দিনকে ঘিরে, বাংলাদেশিরা নানা আয়োজন করে থাকে। শ্রদ্ধা ভরে স্বরন করে থাকে বীর শহিদদের। এইদিনে হয়ে থাকে স্বাধীনতা দিবস রচনা প্রতিযোগীতা, কবিতা আবৃত্তি ও বিভিন্ন আয়োজন। আমাদের এই পোষ্টে আমরা স্বাধীনতা দিবসের কিছু বিখ্যাত কবিতা আপনাদের জন্য তুলে ধরবো। আপনি যদি স্বাধীনতা দিবসের কবিতা, ২৬ শে মার্চ কবিতা অনুসন্ধান করেন তাহলে এই লিখাতে আপনাকে স্বাগতম।
২৬ শে মার্চ কবিতা ২০২৪
বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবস পালিত হয় ২৬শে মার্চ। ১৯৪৭ সালে যখন ভারত এবং পাকিস্তান বিভক্ত হয়ে পূর্ব পাকিস্তান এবং পশ্চিম পাকিস্তান সংঘটিত হয়। ঠিক তখন থেকে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত পূর্ব পাকিস্তান এবং পশ্চিম পাকিস্তানের মধ্যে বিভিন্ন ধরনের সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক এবং অন্যান্য বিষয়সমূহ নিয়ে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ধরনের দ্বন্দ্ব তৈরি হয়।
আর এই দ্বন্দ্ব এবং বিরোধ যখন চূড়ান্ত পর্যায়ে এসে যায় তখন পূর্ব পাকিস্তানের অর্থাৎ বর্তমান বাংলাদেশের বাঙালিরা গর্জে উঠে। এরপর দীর্ঘ নয় মাস প্রায় ত্রিশ লক্ষ শহীদের প্রানের বিনিময়ে যুদ্ধ চলে এবং বাংলাদেশ বিজয় অর্জনের মাধ্যমে স্বাধীনতা পায়। আর ঠিক সেই ১৯৭১ সাল থেকে বর্তমান পর্যন্ত স্বাধীনতা দিবস পালন হয়ে আসছে ২৬শে মার্চ। আর এই দিনকে নিয়ে রয়েছে নানা কবিতা, ছন্ধ ও প্রবন্ধ।
স্বাধীনতা দিবস কবিতা ২০২৪
২৬শে মার্চ পালন করার জন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে বিভিন্ন ধরনের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। আর সেই সকল অনুষ্ঠানের কবিতা আবৃতি করার জন্য অনেকে অংশগ্রহণ করেন। কিন্তু আপনারা অনেকে কবিতা লিখতে পারেন না। কিন্তু এই কবিতা আবৃত্তি করার জন্য কোথা থেকে কবিতা সংগ্রহ করবেন।
তাই আজ আমরা আপনাদের এই সমস্যা দূর করার জন্য আপনাদের জন্য ২৬শে মার্চের কবিতা নিয়ে হাজির হয়েছে। আপনারা চাইলে আপনার এখান থেকে কবিতা সংগ্রহ করে আপনাদের প্রয়োজন অনুসারে কবিতা আবৃতি করতে পারেন।
২৬ শে মার্চ কবিতা: অস্ত্র সমর্পণ
-হেলাল হাফিজ
মারণাস্ত্র মনে রেখো ভালোবাসা তোমার আমার।
নয় মাস বন্ধু বলে জেনেছি তোমাকে, কেবল তোমাকে।
বিরোধী নিধন শেষে কতোদিন অকারণে
তাঁবুর ভেতরে ঢুকে দেখেছি তোমাকে বারবার কতোবার।
মনে আছে, আমার জ্বালার বুক
তোমার কঠিন বুকে লাগাতেই গর্জে উঠে তুমি
বিস্ফোরণে প্রকম্পিত করতে আকাশ, আমাদের ভালবাসা
মুহূর্তেই লুফে নিত অত্যাচারী শত্রুর নি:শ্বাস।
মনে পড়ে তোমার কঠিন নলে তন্দ্রাতুর কপালের
মধ্যভাগ রেখে, বুকে রেখে হাত
কেটে গেছে আমাদের জঙ্গলের কতো কালো রাত!
মনে আছে, মনে রেখো
আমাদের সেই সব প্রেম-ইতিহাস।
অথচ তোমাকে আজ সেই আমি কারাগারে
সমর্পণ করে, ফিরে যাচ্ছি ঘরে
মানুষকে ভালোবাসা ভালোবাসি বলে।
যদি কোনোদিন আসে আবার দুর্দিন,
যেদিন ফুরাবে প্রেম অথবা হবে না প্রেম মানুষে মানুষে
ভেঙে সেই কালো কারাগার
আবার প্রণয় হবে মারণাস্ত্র তোমার আমার।
স্বাধীনত দিবসের কবিতা: এ লাশ আমরা রাখবো কোথায়
হুমায়ুন আজাদ
এ লাশ আমরা রাখবো কোথায় ?
তেমন যোগ্য সমাধি কই ?
মৃত্তিকা বলো, পর্বত বলো
অথবা সুনীল-সাগর-জল-
সব কিছু ছেঁদো, তুচ্ছ শুধুই !
তাইতো রাখি না এ লাশ আজ
মাটিতে পাহাড়ে কিম্বা সাগরে,
হৃদয়ে হৃদয়ে দিয়েছি ঠাঁই।
শহীদদের প্রতি
__আসাদ চৌধুরী
তোমাদের যা বলার ছিল
বলছে কি তা বাংলাদেশ ?
শেষ কথাটি সুখের ছিল ?
ঘৃণার ছিল ?
নাকি ক্রোধের,
প্রতিশোধের,
কোনটা ছিল ?
নাকি কোনো সুখের
নাকি মনে তৃপ্তি ছিল
এই যাওয়াটাই সুখের।
তোমরা গেলে, বাতাস যেমন যায়
গভীর নদী যেমন বাঁকা
স্রোতটিকে লুকায়
যেমন পাখির ডানার ঝলক
গগনে মিলায়।
সাঁঝে যখন কোকিল ডাকে
কারনিসে কি ধুসর শাখে
বারুদেরই গন্ধস্মৃতি
ভুবন ফেলে ছেয়ে
ফুলের গন্ধ পরাজিত
স্লোগান আসে ধেয়ে।
তোমার যা বলার ছিল
বলছে কি তা বাংলাদেশ ?
কবিতা: স্বাধীনতা তুমি
– শামসুর রাহমান
স্বাধীনতা তুমি
রবিঠাকুরের অজর কবিতা, অবিনাশী গান।
স্বাধীনতা তুমি
কাজী নজরুল ঝাঁকড়া চুলের বাবরি দোলানো
মহান পুরুষ, সৃষ্টিসুখের উল্লাসে কাঁপা-
স্বাধীনতা তুমি
শহীদ মিনারে অমর একুশে ফেব্রুয়ারির উজ্জ্বল সভা
স্বাধীনতা তুমি
পতাকা-শোভিত শ্লোগান-মুখর ঝাঁঝালো মিছিল।
স্বাধীনতা তুমি
ফসলের মাঠে কৃষকের হাসি।
স্বাধীনতা তুমি
রোদেলা দুপুরে মধ্যপুকুরে গ্রাম্য মেয়ের অবাধ সাঁতার।
স্বাধীনতা তুমি
মজুর যুবার রোদে ঝলসিত দক্ষ বাহুর গ্রন্থিল পেশী।
স্বাধীনতা তুমি
অন্ধকারের খাঁ খাঁ সীমান্তে মুক্তিসেনার চোখের ঝিলিক।
স্বাধীনতা তুমি
বটের ছায়ায় তরুণ মেধাবী শিক্ষার্থীর
শানিত কথার ঝলসানি-লাগা সতেজ ভাষণ।
স্বাধীনতা তুমি
চা-খানায় আর মাঠে-ময়দানে ঝোড়ো সংলাপ।
স্বাধীনতা তুমি
কালবোশেখীর দিগন্তজোড়া মত্ত ঝাপটা।
স্বাধীনতা তুমি
শ্রাবণে অকূল মেঘনার বুক
স্বাধীনতা তুমি পিতার কোমল জায়নামাজের উদার জমিন।
স্বাধীনতা তুমি
উঠানে ছড়ানো মায়ের শুভ্র শাড়ির কাঁপন।
স্বাধীনতা তুমি
বোনের হাতের নম্র পাতায় মেহেদীর রঙ।
স্বাধীনতা তুমি বন্ধুর হাতে তারার মতন জ্বলজ্বলে এক রাঙা পোস্টার।
স্বাধীনতা তুমি
গৃহিণীর ঘন খোলা কালো চুল,
হাওয়ায় হাওয়ায় বুনো উদ্দাম।
স্বাধীনতা তুমি
খোকার গায়ের রঙিন কোর্তা,
খুকীর অমন তুলতুলে গালে
রৌদ্রের খেলা।
স্বাধীনতা তুমি
বাগানের ঘর, কোকিলের গান,
বয়েসী বটের ঝিলিমিলি পাতা,
যেমন ইচ্ছে লেখার আমার কবিতার খাতা।
২৬শে মার্চের ছোট কবিতা
আপনাদের জন্য ২৬শে মার্চ স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে বেশ কিছু ছন্দ নিয়ে এসেছি। আপনারা এখান থেকে সংগ্রহ করে স্বাধীনতা দিবসের দিন বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের ব্যবহার করতে পারেন। অথবা কোনো বক্তব্য ভাষণ দেওয়ার সময় এ ধরনের ব্যবহার করতে পারেন।
ছাব্বিশে মার্চ
– স্বপন শর্মা
সংগ্রামী চেতনায় বিজয়ের উল্লাস;
হাসি গান আর আবেগের প্রকাশ।
জন্ম অধিকার বাঙ্গালী
বিশ্ব মাঝে বাংলা জাতীয় ইতিহাস;
যার নেপথ্য নায়ক –
মহান ছাব্বিশে মার্চ।
মায়ের অপত্য স্নেহ
বোনের হৃদয় নিংরানো ভালোবাসা
ঐক্য, সম্প্রীতি, সদ্ভাব-
ছাব্বিশেই যার উদ্ভব।
মুক্তির আত্নপ্রতয়ে ভাঙ্গল যারা শিকল
আনল যারা স্বাধীনতা
আমরা তাদের ভুলিনী
এবং ভুলব না।
অনেক চড়াই উৎরাই পেরিইয়ে
আর বলার অপেক্ষায় থাকে না
আমরা আজ স্বাধীন।
আমরা আজ স্বাধীন সংগ্রামী চেতনায়
বিজয়ের উল্লাস থাকবে মোদের
আনন্দ হাসি গান আর জাতীয় চেতনায়।
কেউ ছুটবে ফুলের তোড়া নিয়ে
কেউ ফেস্টুন হাতে-
রঙ্গীন আভা নিয়ে উদিত হয় সূয্য টা
পূর্ব আকাশে।
সে কোন আগ্রহ আর ব্যাকুলতা।
অনেকে হয়ত আজ জানোনা
কেন ফিরে আসে এই দিন?
এখনো সেই সব বাঙ্গালী রাজাকার
ক্ষুদিতের খানা গ্রাসে-
রনরোষ নিয়ে আসতে চায়;
এই দিনে আজ প্রতিবাদ হোক তার
আমাদের এই স্বাধীন বাংলায়।
উচ্চারণগুলি শোকের – আবুল হাসান
লক্ষি বউটিকে আমি আজ আর কোথাও দেখিনা, হাটি হাটি শিশুটিকে কোথাও দেখিনা, কতগুলি রাজহাঁস দেখি নরম শরীর ভরা রাজহাঁস দেখি, কতগুলি মুখস্থ মানুষ দেখি, বউটিকে কোথাও দেখিনা শিশুটিকে কোথাও দেখিনা!
তবে কি বউটি রাজহাঁস? তবে কি শিশুটি আজ সবুজ মাঠের সূর্য, সবুজ আকাশ?
অনেক রক্ত যুদ্ধ গেলো, অনেক রক্ত গেলো, শিমুল তুলোর মতো সোনারূপো ছড়ালো বাতাস।
ছোটো ভাইটিকে আমি কোথাও দেখিনা, নরোম নোলক পরা বোনটিকে আজ আর কোথাও দেখিনা!
কেবল পতাকা দেখি, কেল উৎসব দেখি, স্বাধীনতা দেখি,
তবে কি আমার ভাই আজ ঐ স্বাধীন পাতাকা? তবে কি আমার বোন, তিমিরের বেদীতে উৎসব?
একটি পতাকা পেলে হেলাল হাফিজ
কথা ছিলো একটি পতাকা পেলে আমি আর লিখবো না বেদনার অঙ্কুরিত কষ্টের কবিতা
কথা ছিলো একটি পতাকা পেলে ভজন গায়িকা সেই সন্ন্যাসিনী সবিতা মিস্ট্রেস ব্যর্থ চল্লিশে বসে বলবেন,–’পেয়েছি, পেয়েছি’।
কথা ছিলো একটি পতাকা পেলে পাতা কুড়োনির মেয়ে শীতের সকালে ওম নেবে জাতীয় সংগীত শুনে পাতার মর্মরে।
কথা ছিলো একটি পতাকা পেলে ভূমিহীন মনুমিয়া গাইবে তৃপ্তির গান জ্যৈষ্ঠে-বোশেখে, বাঁচবে যুদ্ধের শিশু সসন্মানে সাদা দুতে-ভাতে।
কথা ছিলো একটি পতাকা পেলে আমাদের সব দুঃখ জমা দেবো যৌথ-খামারে, সম্মিলিত বৈজ্ঞানিক চাষাবাদে সমান সুখের ভাগ সকলেই নিয়ে যাবো নিজের সংসারে।
যাইহোক, আমাদের আজকের পোষ্ট আপনি কিছু বিখ্যাত স্বাধীনতা দিবসের কবিতা, ২৬ শে মার্চ কবিতা সম্পর্কে জানলেন। এই কবিতা বিখ্যাত লোকদের লিখা। এগুলো আপনি যেকোন প্রতিযোগীয় বা অনুষ্টানে আবৃতি করতে পারেন।