অন্যান্য

ঈদের নামাজের নিয়ম, নিয়ত, তাকবির, খুতবা ও কিছু মাসআলা

ঈদের নামাজের নিয়ম, নিয়ত এবং দোয়া ও খুতবা ২০২৪. ইসলাম ধর্মের সবচেয়ে বড় উৎসব হচ্ছে ঈদ। ঈদ উদযাপন করা হয় ঈদের চাঁদ যখন দেখা যায় ঠিক তখন থেকে। কারণ আমরা ঈদের চাঁদ দেখার পর নিশ্চিত হতে পারি ঈদ উদযাপন হবে কিনা। তবে ঈদের দিন সকাল বেলা ঈদের নামাজ আদায় করতে হয়। তাই আজ আমরা আপনাদের জন্য ঈদের নামাজের নিয়ম, নিয়ত এবং দোয়া ও খুতবা নিয়ে এসেছি। যাতে করে আপনারা ঈদের নামাজ সম্পর্কে জানতে পারেন এবং ঈদের নামাজের সঠিক নিয়ম জানতে পারেন।

সকল শ্রেণীর মানুষ আমরা ঈদ উদযাপন করার জন্য সকলেই নিজেদের সামর্থ্য অনুসারে নতুন পোশাক ক্রয় করে থাকি এবং সেই পোশাক পরে সবার আগে নামাজ পড়ার কথা আমরা ভেবে থাকি। ঈদের সকালে ঈদের নামাজ পড়ার মধ্য দিয়ে ঈদ উদযাপনের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। তাই আমাদের অবশ্যই সকলের উচিত ঈদের নামাজের নিয়ম জানা এবং ঈদের নামাজের নিয়ত কিভাবে করতে হয় সে সম্পর্কে জানাতে দোয়া এবং খুতবা সম্পর্কে তো জানতেই হবে। তাহলে আমরা এখন জেনে নেই ঈদের নামাজের নিয়ম।

ঈদের নামাজের নিয়ম

ঈদের নামাজ আদায় করার জন্য সকল মুসল্লীরা নতুন পোশাক পরিধান করে। তবে ঈদের নামাজ অন্যান্য নামাজের তুলনায় ভিন্ন। ঈদের নামাজ পড়া হচ্ছে ওয়াজিব। আর এই নামাজ আমরা সাধারণত পাঁচ ওয়াক্ত ফরজ নামাজ আদায় যেভাবে করি ঠিক সেভাবে নয়। ঈদের নামাজ কোন ভাবে কাযা পড়ার সুযোগ নেই সুতরাং আপনাদের ঈদের সকালে মসজিদে উপস্থিত হয়ে ঈদের নামাজ আদায় করতে পারবেন।

ঈদের নামাজ ১২ তাকবীর পড়তে হয় বা ঈদের নামাজের তাকবীর ৬টি (বিষয়টি নিয়ে মতবেদ আছে)। তাছাড়া ঈদের নামাজের জন্য আযান দেয়া হয় না যেভাবে প্রতিদিন পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের জন্য আযান দেয়া হয়। যেহেতু আমরা আপনাদেরকে পূর্বে কি ঈদের নামায সাধারন নামাজের মত নয় আপনাদের মনে প্রশ্ন আসবে তাহলে ঈদের নামাজের নিয়ম কি। তাই আজ আমরা আপনাদের জন্য ঈদের নামাজের নিয়ম জানাতে এসেছি। নিম্ন ঈদের নামাজ নিয়ম দেয়া হলো-

  • ঈদের সালাত আদায় করার জন্য আপনাদেরকে অবশ্যই পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন হয়ে নতুন বা পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন পোশাক পরিধান করতে হবে।
  • অজু করে কিবলামুখী হয়ে দাঁড়াতে হবে।
  • ইমামের পেছনে দাঁড়িয়ে ঈদুল ফিতরের দুই রাকাত ওয়াজিব নামাজ এর ছয় তাকবীরের সঙ্গে ঈদের নামাজ আদায় করতে হয়।
  • ঈদের নামাজের জন্য নিয়ত করে আল্লাহু আকবার বলে হাত তুলে তাহারিমা বাঁধতে হবে এবং সানা পাঠ করতে হবে।
  • সানা পাঠ করার পর তিনবার আল্লাহু আকবার উচ্চারণ করে তাকবীর বলতে হয়। প্রথম কান পর্যন্ত হাতিয়ে নিতে হবে এবং তৃতীয় তাকবীর বলে হাত বেঁধে দিতে হবে (প্রতিটি তাকবীরের পর তিন বার সুবহানাল্লাহ বলা হয় এমন সময় থামতে হয়)।
  • এরপর আউযুবিল্লাহ এবং বিসমিল্লা পড়ে সূরা ফাতিহার পর যে কোন সূরা সংযুক্ত করতে পারেন। যেহেতু আপনারা মসজিদে ঈদের নামাজ পাঠ করবেন সেহেতু ইমাম সূরা ফাতিহার পর যে কোন সূরা সংযুক্ত করে দিবেন।
  • আমরা স্বাভাবিক নামাজের যেরকম করে রুকু এবং সিজদা দিয়ে থাকি ঠিক সেভাবে রুকু এবং সেজদা দিতে হবে। এরপর দ্বিতীয় রাকাতের জন্যে দাঁড়িয়ে যেতে হবে।
  • এখন আবার বিসমিল্লাহ পাঠ করতে হবে এবং সূরা ফাতিহার সাথে অন্য সূরা মিলিয়ে পড়তে হবে। তারপর তিনটি সম্পন্ন করার জন্য তিন বার আল্লাহু আকবার বলতে হবে। আর এই তিনটি তাকবীর দেওয়ার সময় প্রতিটি তাকবীরের পর হাত ছেড়ে দিতে হবে এবং চতুর্থবার আল্লাহু আকবার বলে হাত না বেঁধে রুকু দিতে হবে।
  • রুকু দেয়ার পর সেজদা দিতে হবে এবং আখেরী বৈঠকের পর সালাম ফেরানোর মধ্য দিয়ে ঈদের সালাতের নামাজের সমাপ্তি হয়।
  • এরপর ইমাম ঈদের দুই রাকাত নামায শেষ করার পর দুটি খুতবা দেন আর এই খুতবা দেয়ার মধ্য দিয়ে ঈদের সালাতের সমাপ্তি ঘটে এবং ঈদের সালাতের খুতবা সোনা ওয়াজিব। খুতবা শেষ হয়ে যাওয়ার পর মসজিদ থেকে বের হয়ে যেতে পারবেন মুসল্লীরা।
ঈদের নামাজের নিয়ত
ঈদের নামাজের নিয়ত

ঈদের নামাজের নিয়ত

ঈদের নামাজের নিয়ত অন্তরে অর্থ্যাৎ মন থেকে করতে হবে। নিয়ত করার বিষয় মুখে বলার বিষয় না। আপনার মনে বা অন্তরে নামাজ পড়ার নিয়ত হলো, মূলত নিয়ত। তারপরও অনেকে মূখে উচ্চারন করার নিয়ত খোজ করেন।

আমরা নিম্নে ঈদের নামাজের নিয়ত দিয়ে দিচ্ছি-

“নাওয়াইতু আন উছ ল্লিয়া লিল্লাহি তায়আলা রাকয়াতা ছালাতিট ঈদুল আযহা মাআছিত্তাতি তাক-বীরাতি ওয়াজিবুল্লাহি তা আলা ইক্বতাদাইতু বিহাজাল ইমাম, মুতাওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল কাবাতিশ শারীফাতি আল্লাহু আকবার।

নোট: নিয়ম মুখে উচ্চারন করে পড়ার দরকার হয়না। নিয়ম আপনার অন্তরে থাকাটা জুররি।

নামাজের সালাম ফেরানোর পর তাকবির পড়া-

اَللهُ اَكْبَر اَللهُ اَكْبَر لَا اِلَهَ اِلَّا اللهُ وَاللهُ اَكْبَر اَللهُ اَكْبَروَلِلهِ الْحَمْد

উচ্চারণ : ‘আল্লাহু আকবর, আল্লাহু আকবার, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবর ওয়া লিল্লাহিল হামদ।’

নামাজের পর ইমাম সাহেবের দুইটি খুতবা দেওয়া। ঈদের নামাজ পড়ার পর ইমাম খুতবা দেবে আর মুসল্লিরা খুতবা মনোযোগের সঙ্গে শুনবে।

ঈদের নামাজের দোয়া

ঈদের সালাত আদায় করার জন্য কোন বিশেষ দোয়া নেই তবে সকল মুসলিম ভাই ও বোনদের জন্য কল্যাণ কামনার জন্য এবং সকলেরই সুন্দরভাবে  ঈদ উদযাপন করতে পারে তা নিয়ে একটি মোনাজাতের মাধ্যমে মহান আল্লাহ তায়ালার নিকট দোয়া প্রার্থনা করা যেতে পারে।

ঈদের নামাজের খুতবা

ঈদের নামাজ আদায় করার পর ইমাম সকল মুসলিমদের উদ্দেশ্যে খুতবা দিয়ে থাকেন আর এই খুতবা সকল মুসল্লীরা মনোযোগ সহকারে শুনে থাকে। ঈদের সালাত আদায় করার পর খুতবা নিয়ে অনেক মতবিরোধ রয়েছে তবে আপনাদের যদি খুতবা না শুনেন অথবা খুতবা সকলের উদ্দেশে না দেয়া হয় তাহলে ঈদের নামাজের কোন ক্ষতি হবে না।

তবে এই খুতবার মাধ্যমে ইসলাম ধর্মের বিভিন্ন বিষয় এবং দিকনির্দেশনা সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করা যায়/ হযরত আব্দুল্লাহ বিন সায়েব (রা.) থেকে বর্ণিত হয়েছে তিনি বলেন আমি নবী করিম সাঃ এর সাথে ঈদ উদযাপন করলাম। আর তিনি যখন ঈদের নামাজ শেষ করলেন এবং সকলকে বললেন আমরা এখন খুতবা দিব। আপনাদের যাদের খুতবা শুনতে ভাল লাগবে তারা আমাদের সঙ্গে থাকতে পারেন অথবা যারা খুতবা শুনতে চান না তারা চলে যেতে পারেন। ( আবু দাউদঃ ১১৫৭)।

ঈদের সালাতের খুতবা সাধারণত ইসলাম সম্পর্কে জ্ঞান এবং দ্বীনের দাওয়াত দিয়ে থাকেন। সুতরাং আমরা এ থেকে বুঝতে পারি যে ঈদের নামাজের খুতবা না শুনলেও কোন ক্ষতি হবে না তবে যদি আপনারা ঈদের খুতবা শুনেন তাহলে আপনার ইসলাম সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করা হবে এবং দ্বীনের দাওয়াত সম্পর্কে অবগত হতে পারবেন।

ঈদের নামাজের কিছু মাসআলা

ঈদের নামাজের কিছু মাসআলা রয়েছে আর এই সকল মাসালা গুলো অবশ্যই মুসলিমদের মেনে চলা উচিত। কারণ এই সকল মাসআলার মাধ্যমে আমরা সঠিকভাবে ইবাদত পালন করতে পারব। তাহলে চলুন জেনে নেই ঈদের নামাজের কিছু গুরুত্বপূর্ণ মাসআলা।

  • ঈদের নামাযের পূর্বে কোনো নারী অথবা পুরুষ যদি যদি নফল নামাজ আদায় করে তাহলে তা মাকরুহ হয়ে যায়।
  • ঈদের সালাত এলাকার সকল মুসুল্লিরা একসাথে হয়ে এক স্থানে ঈদের সালাত আদায় করা উত্তম। তবে বিভিন্ন স্থানে পড়া যাবে।
  • কোন কারণে যদি আপনারা ঈদের সালাত না পড়তে পারেন তাহলে এই নামাজের কোন কাজা নামাজ দেয়া যায় না। কারণ ঈদের সালাত জামাতের সাথে পড়া হয়। আর যদি আপনাদের ঈদের সালাত আদায় না করতে পারেন তাহলে আপনারা অন্য কোথাও বা বেশ কিছু লোকের মধ্যে থেকে একজন ইমাম নির্বাচন করে ঈদের সালাত আদায় করতে পারেন।
  • আপনাদের যদি শাওয়াল মাসের ১ তারিখে কোন ভাবে দ্বিপ্রহরের পূর্বে শরীয়ত সম্মতভাবে যেকোনো কারণে ঈদের নামাজ আদায় করতে না পারেন তাহলে শাওয়াল মাসের ২ তারিখে ঈদের সালাত পড়ার অনুমতি রয়েছে। কিন্তু এরপর আর এই সালাত আদায় করা যাবে না।

আশা করছি আপনারা যারা ঈদ এর নামাজ এর নীয়ম জানতেন না তারা আমাদের এই আর্টিকেলের মাধ্যমে ঈদের নামাজের নিয়ম, নিয়ত, দোয়া এবং খুতবা সম্পর্কে জানতে পেরেছেন। সকল মুসলিম ভাই ও বোনেরা সুন্দরভাবেই ঈদ উদযাপন করেন এবং ঈদের আনন্দ সকল আত্মীয়-স্বজন বন্ধু-বান্ধব পাড়া প্রতিবেশীদের সাথে ভাগ ভাগ করে নেন। তবে আপনাদের যদি ঈদের সালাত সম্পর্কিত কোন প্রশ্ন থেকে থাকে তাহলে আমাদেরকে কমেন্টের মাধ্যমে বলতে পারেন।  আমাদের পক্ষ থেকে আপনাদেরকে ঈদের শুভেচ্ছা রইল- ঈদ মোবারক।

Related Articles

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

Back to top button