এ্যাসাইনমেন্ট

মানচিত্রে মহাদেশ গুলোর অবস্থান ও পরিচিত।

এইচএসসি ভূগোল ২য় পত্র ৮ম সপ্তাহের এসাইনমেন্ট ২০২২ সমাধান। মানচিত্রে মহাদেশ গুলাের অবস্থান ও পরিচিতি।

নির্দেশনা

  • ক. পৃথিবীর মানচিত্র
  • খ. মানচিত্রে মহাদেশ ও মহাসাগর
  • গ. মহাদেশ সম্পর্কিত তথ্য

পৃথিবীর মানচিত্রঃ

পৃথিবীর মানচিত্রে মহাদেশ ও মহাসাগর চিহ্নিতকরণঃ-

Related Articles

খ) মহাদেশের অবস্থান পরিচিতিঃ

পৃথিবীর মহাদেশসমূহ (Continents of the World) আমরা পূর্বেই জেনেছি, পৃথিবীতে সাতটি মহাদেশ রয়েছে। এগুলো হলো- এশিয়া, আফ্রিকা, উত্তর আমেরিকা, দক্ষিণ আমেরিকা, এন্টার্কটিকা, ইউরোপ এবং অস্ট্রেলিয়া। নিম্নে মহাদেশসমূহের অবস্থান ও পরিচিতি বর্ণনা আলোচনা করা হলো:

১. এশিয়া (Asia):

আয়তনে পৃথিবীর বৃহত্তম মহাদেশ এশিয়া। এ মহাদেশের আয়তন ৪ কোটি ৫০ লক্ষ ৩৬ হাজার ৪৯২ বর্গকিলোমিটার। পৃথিবীর স্থলভাগের প্রায় এক তৃতীয়াংশের কাছাকাছি এশিয়া মহাদেশের অন্তর্ভুক্ত। এ মহাদেশ ১০° দক্ষিণ অক্ষরেখা থেকে ৮০° উত্তর অক্ষরেখা এবং ২৫° পূর্ব দ্রাঘিমারেখা থেকে ১৭০° পশ্চিম দ্রাঘিমারেখা (১৮০° পূর্ব দ্রাঘিমারেখা অতিক্রম করে আরো ১০° দ্রাঘিমারেখা) পর্যন্ত বিস্তৃত। এশিয়া মহাদেশের প্রায় মধ্যভাগ দিয়ে ৯০° পূর্ব দ্রাঘিমারেখা অতিক্রম করেছে। এ মহাদেশের সর্বোচ্চ স্থান মাউন্ট এভারেষ্ট (৮,৮৫০ মিটার)।

মহাদেশটির উত্তরে উত্তর মহাসাগর, দক্ষিণে ভারত মহাসাগর, পূর্বে প্রশান্ত মহাসাগর, দক্ষিণ-পশ্চিমে লোহিত সাগর ও আফ্রিকা মহাদেশ এবং পশ্চিমে ভূ-মধ্যসাগর ও ইউরোপ মহাদেশ অবস্থিত। এশিয়া এবং ইউরোপ মহাদেশের মাঝ বরাবর ইউরাল পর্বতমালা অবস্থিত। দ্বীপপুঞ্জ দ্বারা গঠিত জাপান, ফিলিপাইন, ইন্দোনেশিয়া এ মহাদেশে অবস্থিত। এগুলোকে খণ্ডিত রাষ্ট্রও বলা হয়। এ মহাদেশের অন্তর্ভুক্ত জাপানকে সূর্যোদয়ের দেশ বলা হয়। এশিয়া মহাদেশে বিভিন্ন আয়তনের ৫০টি দেশ রয়েছে। এর মধ্যে আয়তনে চীন বৃহত্তম (৯৫,৬১,০০০ বর্গকিলোমিটার) এবং মালদ্বীপ ক্ষুদ্রতম (২৯৮ বর্গকিলোমিটার)। এশিয়ার দীর্ঘতম নদী ইয়াংসিকিয়াং (৫,৯৮০ কিলোমিটার)। এ মহাদেশে মোট জনসংখ্যা ৪,৪৩৭ মিলিয়ন (পপুলেশন রেফারেন্স ব্যুরো-পিআরবি, ২০১৬)।

২. আফ্রিকা (Africa) :

আফ্রিকা মহাদেশ আয়তনে দ্বিতীয় বৃহত্তম। এর আয়তন ৩ কোটি ৩ লক্ষ ৪৩ হাজার ৫৭৮ বর্গকিলোমিটার। এটি ৩৭° উত্তর অক্ষরেখা থেকে প্রায় ৩৫° দক্ষিণ অক্ষরেখা এবং ১৭° পশ্চিম দ্রাঘিমারেখা থেকে ৫১° পূর্ব দ্রাঘিমারেখা পর্যন্ত বিস্তৃত। আফ্রিকা মহাদেশের প্রায় মধ্যভাগ দিয়ে বিষুবরেখা বা নিরক্ষরেখা (Equator) অতিক্রম করেছে। এ মহাদেশের উত্তরে ভূ-মধ্যসাগর, দক্ষিণে দক্ষিণ মহাসাগর, পূর্বে ভারত মহাসাগর ও লোহিত সাগর এবং পশ্চিমে আটলান্টিক মহাসাগর অবস্থিত। মহাদেশটির সর্বোচ্চ স্থান কিলিমাঞ্জারো (৫,৯৬৩ মিটার)। আয়তনে আফ্রিকার সবচেয়ে বড় দেশ সুদান (২৫,০৫,৮১৩ বর্গকিলোমিটার) এবং সবচেয়ে ছোট মিচেলিস (৩০৮ বর্গকিলোমিটার)। এ মহাদেশের দীর্ঘতম নদী নীলনদ (৬,৬৬৯ কিলোমিটার)। আফ্রিকা এবং ইউরোপ মহাদেশকে পৃথক করেছে ভূ-মধ্যসাগর। এ মহাদেশে বসবাসকারী মোট জনসংখ্যা ১,২০৩ মিলিয়ন (পিআরবি, ২০১৬)।

৩. উত্তর আমেরিকা (North America) :

পৃথিবীর তৃতীয় বৃহত্তম মহাদেশ উত্তর আমেরিকা। এটি দেখতে ত্রিভূজাকৃতির। এর আয়তন ২ কোটি ৫০ লক্ষ ৮০ হাজার ৩৩১ বর্গকিলোমিটার মহাদেশটি ৮৩° উত্তর অক্ষরেখা থেকে দক্ষিণে ৮° উত্তর অক্ষরেখা এবং পূর্বে ৫২° পশ্চিম দ্রাঘিমারেখা থেকে পশ্চিমে প্রায় ১৭০° পশ্চিম দ্রাঘিমারেখা পর্যন্ত বিস্তৃত। এ মহাদেশের উত্তরে উত্তর মহাসাগর, দক্ষিণে দক্ষিণ আমেরিকা মহাদেশ, পূর্বে আটলান্টিক মহাসাগর এবং পশ্চিমে প্রশান্ত মহাসাগর অবস্থিত।

১৪৯২ সালে কলম্বাস উত্তর আমেরিকা আবিষ্কার করেন। এ মহাদেশের সর্বোচ্চ স্থান ম্যাককিনলে (৬,১৯৪ মিটার)। পানামা খাল উত্তর আমেরিকাকে দক্ষিণ আমেরিকা থেকে পৃথক করেছে। এ মহাদেশে ছোট-বড় অনেকগুলো দ্বীপ রয়েছে। এর মধ্যে গ্রীনল্যান্ড, নিউফাউন্ডল্যান্ড অন্যতম। এ মহাদেশের মধ্য আমেরিকা থেকে মিসিসিপি অববাহিকা পর্যন্ত সুবিস্তৃত সমভূমি অঞ্চলকে প্রচুর পরিমাণে গম উৎপাদনের জন্য ‘বিশ্বের রুটির ঝুড়ি’ বলা হয়। মিসিসিপি-মিসৌরি এ মহাদেশের দীর্ঘতম নদী (৫,৯৭০ কিলোমিটার)। ২৩টি দেশ নিয়ে উত্তর আমেরিকা গঠিত। আয়তনে সবচেয়ে বড় দেশ কানাডা (৯৯,৩৬,১৪০ বর্গকিলোমিটার) এবং সবচেয়ে ছোট বার্বাডোস (৪৩০ বর্গকিলোমিটার)। এ মহাদেশের মোট জনসংখ্যা ৩৬০ মিলিয়ন (পিআরবি, ২০১৬)।

৪. দক্ষিণ আমেরিকা (South America):

আয়তনে চতুর্থ বৃহত্তম মহাদেশ দক্ষিণ আমেরিকা। এ মহাদেশ দেখতে ত্রিকোণোকৃতির। এর আয়তন ১ কোটি ৭৮ লক্ষ ১৫ হাজার ৪২০ বর্গকিলোমিটার। এটি উত্তরে ১৩° উত্তর অক্ষরেখা থেকে দক্ষিণে ৫৬° দক্ষিণ অক্ষরেখা এবং পূর্বে ৩৪° পশ্চিম দ্রাঘিমারেখা থেকে পশ্চিমে ৮২° পশ্চিম দ্রাঘিমারেখা পর্যন্ত বিস্তৃত। এ মহাদেশের উত্তরে উত্তর ক্যারিবিয়ান সাগর ও উত্তর আটলান্টিক মহাসাগর, দক্ষিণে দক্ষিণ মহাসাগর, পূর্বে আটলান্টিক মহাসাগর এবং পশ্চিমে প্রশান্ত মহাসাগর অবস্থিত। এ মহাদেশের সর্বোচ্চ স্থান আকাঙ্কাগুয়া (৬,৯৫৯ মিটার)।

দক্ষিণ আমেরিকা মহাদেশ ১৪টি দেশ নিয়ে গঠিত। এর মধ্যে আয়তনে বৃহত্তম ব্রাজিল (৮৫,১৫,৭৭০ বর্গকিলোমিটার) এবং ক্ষুদ্রতম সুরিনাম (৫,১২৮ বর্গকিলোমিটার)। এ মহাদেশে অনেকগুলো দ্বীপ রয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম হলো ফকল্যান্ড। দক্ষিণ আমেরিকার দীর্ঘতম এবং পৃথিবীর প্রশস্ততম নদী আমাজান (৬,২৭৫ কিলোমিটার)। এ মহাদেশের অন্তর্গত ইকুয়েডরকে ‘চির বসন্তের দেশ বলা হয়। নিরক্ষরেখা দেশটির উপর দিয়ে অতিক্রম করেছে। মহাদেশটিতে বসবাসকারী মোট জনসংখ্যা ৪১৯ মিলিয়ন (পিআরবি, ২০১৬)।

৫. এন্টার্কটিকা (Antarctica) :

এন্টার্কটিকা মহাদেশ আয়তনে বিশ্বে পঞ্চম। এর মোট আয়তন ১ কোটি ৩৩ লক্ষ ৪০ হাজার বর্গকিলোমিটার। এটি ৯০° দক্ষিণ মেরুরেখা থেকে ৬০° দক্ষিণ অক্ষরেখা পর্যন্ত বিস্তৃত। মহাদেশটি পৃথিবীর দক্ষিণ প্রান্তে অবস্থিত এবং দক্ষিণ মেরুকে কেন্দ্র করে প্রায় বৃত্তাকারে অবস্থিত। এ মহাদেশের চতুর্দিকে দক্ষিণ মহাসাগর অবস্থিত। মহাদেশটি সারাবছর বরফে আচ্ছন্ন থাকে বলে মনুষ্য বসবাসের অনুপযোগী। শীতলতম এই মহাদেশে কোনো দেশ নেই। এখানকার উল্লেখযোগ্য প্রাণি অ্যালবাট্রস, পেঙ্গুইন, সীল ইত্যাদি। এছাড়া এ মহাদেশে মস ও শৈবাল জাতীয় উদ্ভিদ জন্মে।

৬. ইউরোপ (Europe) :

ইউরোপ মহাদেশ আয়তনে বিশ্বে ষষ্ঠ। এর আয়তন ৯৯ লক্ষ ২৮ হাজার ৫৯৯ বর্গকিলোমিটার। এটি ৩৫° উত্তর অক্ষরেখা থেকে ৭১° উত্তর অক্ষরেখা এবং ২৫° পশ্চিম দ্রাঘিমারেখা থেকে ৬৬° পূর্ব দ্রাঘিমারেখা পর্যন্ত বিস্তৃত। ইউরোপ মহাদেশের উত্তরে উত্তর মহাসাগর, দক্ষিণে ভূ-মধ্যসাগর ও কৃষ্ণসাগর, পূর্বে কাস্পিয়ান সাগর, ইউরাল নদী ও ইউরাল পর্বত এবং পশ্চিমে আটলান্টিক মহাসাগর অবস্থিত। এ মহাদেশের সর্বোচ্চ স্থান মাউন্ট এলবুর্জ (৫,৬৩৩ মিটার)। ইউরোপ মহাদেশ ৪৫টি দেশ নিয়ে গঠিত। এর মধ্যে আয়তনে বৃহৎ রাশিয়া (১,৭০,৭৫,৪০০ বর্গকিলোমিটার) এবং ক্ষুদ্রতম ভ্যাটিকান (০.৪৪ বর্গকিলোমিটার)। এশিয়া এবং ইউরোপ উভয় মহাদেশে রাশিয়ার অবস্থান হলেও এটি ইউরোপ মহাদেশের অন্তর্ভুক্ত। এ মহাদেশের দীর্ঘতম নদী ভলগা (৩,৬৮৭ কিলোমিটার)। ইউরোপের শ্রেষ্ঠ শিল্প প্রধান দেশ যুক্তরাজ্য। এ মহাদেশে বসবাসকারী জনসংখ্যা ৭৪০ মিলিয়ন (পিআরবি, ২০১৬)। এশিয়া এবং ইউরোপ মহাদেশকে একত্রে ইউরেশিয়া বলা হয়।

৭. অস্ট্রেলিয়া (Australia) :

অস্ট্রেলিয়া আয়তনে বিশ্বের ক্ষুদ্রতম মহাদেশ। এটি প্রায় ৮৫ লক্ষ ৪ হাজার ২৪১ বর্গকিলোমিটার এলাকা জুড়ে বিস্তৃত। মহাদেশটি পশ্চিমে প্রায় ১১৪° পূর্ব দ্রাঘিমারেখা থেকে পূর্বে ১২০° পশ্চিম দ্রাঘিমারেখা এবং ২৮° উত্তর অক্ষরেখা থেকে ৪৭° দক্ষিণ অক্ষরেখা পর্যন্ত বিস্তৃত। এ মহাদেশের সর্বোচ্চ স্থান পুসাক জায়া (৪,৮৮৪ মিটার)।

আঞ্চলিক অবস্থান অনুসারে অস্ট্রেলিয়া মহাদেশকে ৪টি অঞ্চলে বিভক্ত করা যায়। যথা-অস্ট্রোলেশিয়া, মেলানেশিয়া, মাইক্রোনেশিয়া এবং পলিনেশিয়া। মেলানেশিয়া, মাইক্রোনেশিয়া এবং পলিনেশিয়া নিয়ে ওশেনিয়া অঞ্চল গঠিত। অস্ট্রেলিয়া মহাদেশ ২২টি দেশ নিয়ে গঠিত। এর মধ্যে আয়তনে বৃহত্তম অস্ট্রেলিয়া (৭৬,৮২,৩০০ বর্গকিলোমিটার) এবং ক্ষুদ্রতম নাউরু (২১.৩ বর্গকিলোমিটার)। অস্ট্রেলিয়ার দীর্ঘতম নদী মারে ডার্লিং (৩,৪৯০ কিলোমিটার)। এ মহাদেশের মোট জনসংখ্যা ৪০ মিলিয়ন (পিআরবি, ২০১৬)। শিক্ষার্থীবৃন্দ, এই পাঠে পৃথিবীর মহাদেশসমূহ সম্পর্কে আলোচনা করা হলো।

গ) বাংলাদেশ ও এর বন্ধু রাষ্ট্রঃ

১. ভারত:

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা নিয়ে অনেকেই বলে থাকেন ভারতের প্রত্যক্ষ সহযোগিতা করে. ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে ভারত বাংলাদেশকে প্রচুর সাহায্য করেছে। তবে পূর্ণ বিজয় অর্জনের ১০ দিন আগেই ১৯৭১ সালের ৬ ডিসেম্বর ভারতই প্রথম স্বীকৃতি দিয়েছিল বাংলাদেশকে। ভারত দক্ষিণ এশিয়ার একটি রাষ্ট্র। দেশটির সরকারি নাম ভারতীয় প্রজাতন্ত্র। ভৌগোলিক আয়তনের বিচারে এটি দক্ষিণ এশিয়ার বৃহত্তম এবং বিশ্বের সপ্তম বৃহত্তম রাষ্ট্র।

অন্যদিকে জনসংখ্যার বিচারে এই দেশ বিশ্বের দ্বিতীয় সর্বাধিক জনবহুল এবং পৃথিবীর বৃহত্তম গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র। ভারতের ভূগোল দক্ষিণ এশীয় রাষ্ট্র ভারতের ভূপ্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্যগুলি বর্ণনা করে। ভারত সম্পূর্ণত ইন্দো-অস্ট্রেলীয় পাতের উত্তরাংশে ভারতীয় পাতের উপর ৮°৪’ ও ৩৭°৬’ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৬৮°৭’ ও ৯৭°২৫′ পূর্ব দ্রাঘিমাংশের মধ্যে অবস্থিত। ভারত বিশ্বের সপ্তম বৃহত্তম রাষ্ট্র। দেশটির মোট আয়তন ৩২,৮৭,২৬৩ বর্গকিলোমিটার। ভারতের উত্তর থেকে দক্ষিণে বিস্তার ৩,২১৪ কিলোমিটার এবং পূর্ব থেকে পশ্চিমের বিস্তৃতি ২,৯৯৩ কিলোমিটার।

ভারতের স্থলভাগের পরিসীমা ১৫,২০০ কিলোমিটার এবং উপকূলভাগের দৈর্ঘ্য ৭,৫১৭ কিলোমিটার। ভারত দক্ষিণ-পশ্চিমে আরব সাগর, দক্ষিণ পূর্বে বঙ্গোপসাগর ও দক্ষিণে ভারত মহাসাগর দিয়ে ঘেরা। ভারতীয় উপদ্বীপের দক্ষিণতম বিন্দুটি হল ভারত মহাসাগরের তীরে অবস্থিত কন্যাকুমারিকা অন্তরীপ। আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জের ইন্দিরা পয়েন্ট হল ভারতের দক্ষিণতম বিন্দু। ভারতের দক্ষিণে অবস্থিত দ্বীপরাষ্ট্রগুলি হল মালদ্বীপ, শ্রীলঙ্কা ও ইন্দোনেশিয়া।

মানচিত্রে মহাদেশ গুলাের অবস্থান ও পরিচিতি

পক প্রণালী ও মান্নার উপসাগর ভারতকে শ্রীলঙ্কা থেকে পৃথক করেছে। ভারতের রাষ্ট্রাধীন জলভাগের দৈর্ঘ্য যথাযথ উপকূলসীমা থেকে ১২ সামুদ্রিক মাইল (২২ কিলোমিটার) পর্যন্ত। ভারতের উত্তর সীমা জুড়ে অবস্থান করছে হিমালয় পর্বতমালা। দেশের উত্তর সীমান্তের রাষ্ট্রগুলি হল গণপ্রজাতন্ত্রী চীন (তিব্বত), ভুটান ও নেপাল। পশ্চিমে পাকিস্তান রাষ্ট্রের সঙ্গে ভারতের সীমান্ত পাঞ্জাব সমভূমি ও থর মরুভূমির উপর দিয়ে প্রসারিত। সুদূর উত্তর-পূর্বে ঘন বনাকীর্ণ চিন ও কাচিন পার্বত্য অঞ্চল ভারতকে মায়ানমার রাষ্ট্রের থেকে পৃথক করেছে।

অন্যদিকে এই অঞ্চলেই বাংলাদেশ রাষ্ট্রের সঙ্গে ভারতের সীমান্ত গাঙ্গেয় সমভূমি অঞ্চলের জলবিভাজিকা এবং খাসি ও মিজো পাহাড় দ্বারা পৃথকীকৃত হয়েছে। ভারতের শীতলতম মেরু হিমাচল প্রদেশ। গঙ্গা ভারতের দীর্ঘতম নদী। এই নদী উত্তর ভারতে গাঙ্গেয় সমভূমি অঞ্চলের। এই মরুভূমি বিশ্বের সপ্তম বৃহত্তম মরুভূমি। সিক্কিমের কাঞ্চনজঙ্ঘা (উচ্চতা ৮৫৮৬ মিটার) বর্তমান ভৌগোলিক পরিস্থিতিতে ভারতের সর্বোচ্চ বিন্দু। যদিও পাকিস্তান-অধিকৃত কাশ্মীরের কারাকোরাম (উচ্চতা ৮৬১১ মিটার) শৃঙ্গটিকে ভারত সরকার ভারতের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ বলে দাবি করে। ভারতের জলবায়ু স্থানবিশেষে বিভিন্ন প্রকার। সুদূর দক্ষিণে ভারতের জলবায়ু বিষুব প্রকৃতির হলেও উত্তরে হিমালয় অঞ্চলে দেশের জলবায়ু আল্পীয় প্রকৃতির।

২. রাশিয়া :

ভারতের পর আমাদের মুক্তিযুদ্ধে সবচেয়ে বড় মিত্রশক্তি হিসেবে আবির্ভূত হয় সোভিয়েত ইউনিয়ন। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে রাশিয়া সক্রিয়ভাবে বাংলাদেশকে সহযোগিতা করে। রাশিয়া নামটি রুশ নামক মধ্যযুগীয় একটি রাষ্ট্র থেকে এসেছে যেখানকার অধিকাংশ জনগণই ছিল ইস্ট স্লাভ গোত্রের অন্তর্গত। পরবর্তী ইতিহাসে এই নামটি আরও বিশিষ্ট হয়ে ওঠে দেশটিকে এর জনগণ (রুশকায়া যেমল্যা) বলে ডাকতো যার অর্থ দাড়ায় রুশ ভূমি বা রুশ এর ভূমি। রাশিয়া ও এই রাষ্ট্র হতে উদ্ভূত রাষ্ট্রের নামের পার্থক্য করারা জন্য আধুনিক ইতিহাসে একে কিয়েভান রুশ বলে ডাকা হয়।

রুশ নামটি রুশ নামের একটি গোত্র থেকে এসেছে যারা ছিল মূলত ভারাঞ্জিয়ানদের একটি দল (সম্ভবত সুইডিশ ভাইকিং এবং এরাই প্রথম রুশ নামে একটি রাজ্য প্রতিষ্ঠা করে। রুশ শব্দটির পুরনো ল্যাটিন ভাষার একটি সংস্করণ ছিল রুথেনিয়া যেটি দক্ষিণ ও পশ্চিম রুশে বেশি ব্যবহার করা হত এবং এই অঞ্চলটা ক্যাথলিক ইউরোপ সংলগ্ন ছিল। রাশিয়ার অধিবাসীদের রুশ বলা হয়।রাশিয়া ইউরেশিয়া ভূখণ্ডের উত্তর অংশের বেশির ভাগ এলাকা জুড়ে বিস্তৃত। পূর্ব ইউরোপ এর বেশির ভাগ অংশ রাশিয়াতে পড়েছে। এটি আয়তনের বিচারে বিশ্বের বৃহত্তম দেশ। বিশাল রাশিয়ার প্রকৃতি একই সাথে বৈচিত্র্যময় ও বৈচিত্র্যহীন।

মানচিত্রে মহাদেশ গুলাের অবস্থান ও পরিচিতি

উত্তর থেকে দক্ষিণে তুন্দ্রা, তৈগা, স্তেপ ও অর্ধ-ঊষর মরুভূমি বিস্তৃত। দেশটিতে ৪০টি ইউনেস্কো জীবমণ্ডল সংরক্ষণ এলাকা (Biosphere Reserve) রয়েছে। রাশিয়া বিশ্বের সর্বপ্রথম বৃহত্তম দেশ এবং প্রথম শীতলতম দেশ বলে এ দেশে সারাবছর হিমশীতল এবং শৈত্যপূর্ণ থাকে। অতিরিক্ত আর্কটিক বরফাচ্ছন্নের, অতি উচ্চভূমি এবং রুশ প্রকৃতির হেতু দ্বারা শৈত্যপ্রবাহ সৃষ্টি হয় এবং সারাদিন শৈত্যপ্রবাহ চলতে থাকে। এই দেশে বছরে ১০ মাস শৈত্যপ্রবাহ (সেপ্টেম্বর-মে) এবং ৮ মাস বরফাচ্ছন্ন (অক্টোবর-এপ্রিল) হয়ে থাকে। রাশিয়ার সাইবেরিয়া এলাকায় সারাদিন ঠাণ্ডা ও শৈত্যপ্রবাহ থাকে এবং পশ্চিম দক্ষিণাংশে গরম থাকে। বিধায়, রাশিয়া দেশটি হাড়কাঁপানি ঠাণ্ডা বলে এখানে থাকাটা বরং খুবই কষ্টকর এবং প্রতিকূল।

৩.ভুটান :

আনুষ্ঠানিক নাম কিংডম অব ভুটান দক্ষিণ এশিয়ার একটি রাজতন্ত্র। ভুটানের অধিবাসীরা নিজেদের দেশকে মাতৃভাষা জংখা ভাষায় ‘দ্রুক ইয়ুল’ বা ‘বজ্র ড্রাগনের দেশ’ নামে ডাকে। দেশটি ভারতীয় উপমহাদেশে হিমালয় পর্বতমালার পূর্বাংশে অবস্থিত। ভুটান উত্তরে চীনের তিব্বত অঞ্চল, পশ্চিমে ভারতের সিকিম ও তিব্বতের চুম্বি উপত্যকা, পূর্বে অরুণাচল প্রদেশ এবং দক্ষিণে আসাম ও উত্তরবঙ্গ দ্বারা পরিবেষ্টিত।

ভুটান শব্দটি এসেছে সংস্কৃত শব্দ “ভূ-উত্থান” থেকে যার অর্থ “উঁচু ভূমি”। সংস্কৃত ভাষায় ভোট বা ভোটান্ত বলতেও ভুটান দেশটিকে বোঝানো হয়। ভুটান সার্কের একটি সদস্য রাষ্ট্র এবং মালদ্বীপের পর দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে কম জনসংখ্যার দেশ। ভুটানের রাজধানী ও বৃহত্তম শহর থিম্পু। ফুন্টসলিং ভুটানের প্রধান অর্থনৈতিক কেন্দ্ৰ। ভুটানের আয়তন ৪৬,৫০০ বর্গকিলোমিটার। থিম্পু এর রাজধানী শহর এবং এটি দেশের মধ্য-পশ্চিম অংশে অবস্থিত। অন্যান্য শহরের মধ্যে পারো, ফুন্টসলিং, পুনাখা ও বুমথং উল্লেখযোগ্য। ভুটানের ভূপ্রকৃতি পর্বতময়। উত্তরে সুউচ্চ হিমালয় পর্বতমালা, মধ্য ও দক্ষিণভাগে নিচু পাহাড় ও মালভূমি এবং দক্ষিণ প্রান্তসীমায় সামান্য কিছু সাভানা তৃণভূমি ও সমভূমি আছে।

মানচিত্রে মহাদেশ গুলাের অবস্থান ও পরিচিতি

মধ্যভাগের মালভূমির মধ্যকার উপত্যকাগুলিতেই বেশির ভাগ লোকের বাস। ভুটানের জলবায়ু উত্তরে আল্পীয়, মধ্যে নাতিশীতোষ্ণ এবং দক্ষিণে উপক্রান্তীয়; জুন থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মৌসুমী বায়ুর প্রভাবে বৃষ্টিপাত হয়। স্থলবেষ্টিত দেশ ভুটানের আকার, আকৃতি ও পার্বত্য ভূ-প্রকৃতি সুইজারল্যান্ডের সদৃশ বলে দেশটিকে অনেক সময় এশিয়ার সুইজারল্যান্ড ডাকা হয়। বহির্বিশ্ব থেকে বহুদিন বিচ্ছিন্ন থাকার কারণে ভুটান প্রাণী ও উদ্ভিদের এক অভয়ারণ্য। এখানে বহু হাজার দুর্লভ প্রজাতির প্রাণী ও উদ্ভিদ দেখতে পাওয়া যায়। ভুটানের প্রায় ৭০% এলাকা অরণ্যাবৃত। এই অরণ্যই ভুটানের জীব বৈচিত্র্য সংরক্ষণ করে চলেছে যুগ যুগ ধরে।

৪.মিশর:

আফ্রিকা মহাদেশের উত্তর-পূর্ব কোণে ও এশিয়া মহাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিম কোণে অবস্থিত একটি আন্তঃমহাদেশীয় ভূমধ্যসাগরীয় রাষ্ট্র। এর পূর্ণ সরকারী নাম মিশর আরব প্রজাতন্ত্র। প্রাচীন যুগে মিশর সমগ্র বিশ্বের সবচেয়ে প্রাচীন ও সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটি সভ্যতা ছিল। ১৯৩৬ সালে প্রতিষ্ঠিত আধুনিক মিশরের রাজধানীর নাম কায়রো। মিশরের আয়তন প্রায় ১০,০১,৪৫০ বর্গকিলোমিটার। মিশর আফ্রিকা, ইউরোপ ও এশিয়ার সংযোগস্থলে অবস্থিত।

মিশরের সাথে পশ্চিমে লিবিয়া, দক্ষিণে সুদান, উত্তর-পূর্বে ইসরায়েল এবং ফিলিস্তিনি-অধ্যুষিত গাজা উপত্যকার সীমান্ত রয়েছে। মিশরের উত্তরে ভূমধ্যসাগর এবং পূর্বে আকাবা উপসাগর ও লোহিত সাগর। আকাবা উপসাগরের অপর তীরে জর্দান এবং লোহিত সাগরের অপর তীরে সৌদি আরব অবস্থিত। ভূমধ্যসাগরের অপর তীরে গ্রিস, সাইপ্রাস ও তুরস্ক অবস্থিত। মিশরের ভেতরে দিয়ে বিশ্বের অন্যতম সুদীর্ঘ নদী নীল নদ দক্ষিণ থেকে উত্তর দিকে প্রবাহিত হয়ে ভূমধ্যসাগরে গিয়ে পতিত হয়েছে। নীল নদের দুইপাশের উপত্যকাটি একটি সমতল নিম্নভূমি যার প্রশস্ততা ৮ থেকে ১৬ কিলোমিটার এবং আয়তন প্রায় ৪০ হাজার বর্গকিলোমিটার।

মানচিত্রে মহাদেশ গুলাের অবস্থান ও পরিচিতি

কায়রো নগরীর উত্তরে গিয়ে মোহনার কাছে নদীটি পাখার মত শাখা প্রশাখা নিয়ে ছড়িয়ে পড়ে ঘনবসতিপূর্ণ নীল নদ ব-দ্বীপ এলাকাটি গঠন করেছে। ঊর্ধ্ব মিশরের নীল নদ উপত্যকা ও নিম্ন মিশরের নীল নদ ব-দ্বীপ এবং কিছু বিক্ষিপ্ত মরূদ্যান মিশরের প্রায় সমস্ত কৃষিখাতের ভিত্তি এবং এখানেই দেশটির প্রায় সমস্ত জনগণ (৯৫%) বাস করে। এজন্য মিশরকে “নীল নদের দান” বলা হয়। নীল নদ ও এর উর্বর উপত্যকা মিশরকে দুইভাগে ভাগ করেছে, পূর্বের মরুভূমি ও পশ্চিমের মরুভূমি। পশ্চিমের ঊষর মরুভূমিটি একটি বালুকাবৃত পাথুরে সমতল মালভূমি, যা দেশের দুই-তৃতীয়াংশ আয়তন গঠন করেছে; এখানে কিছু জনঅধ্যুষিত মরূদ্যানের দেখা মেলে। মিশর আফ্রিকার দক্ষিণ পূর্ব কোণে অবস্থিত। মিশরের ভূমি খুবই উর্বর যার ফলে প্রচুর শষ্য উৎপাদিত হয় এখানে। যার ফলে একে কৃষির তৃণভূমি বলা হয়।

ঘ) মানচিত্রে বন্ধু রাষ্ট্রের অবস্থানঃ

ভারতের অবস্থান:


রাশিয়ার অবস্থান:

চীনের অবস্থান:

মিশরের অবস্থান:

Related Articles

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

Back to top button