এ্যাসাইনমেন্ট

বাংলাদেশের সমাজ ও সভ্যতার বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ প্রত্নস্থানের অবদান

বাংলাদেশের সমাজ ও সভ্যতার বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ প্রত্নস্থানের অবদান। এইচএসসি সমাজ বিজ্ঞান ২য় পত্র ৮ম সপ্তাহের এসাইনমেন্ট ২০২২ সমাধান। নির্দেশনা:ক. প্রত্নতত্ত্বের ধারণা ও এর উৎস ব্যাখ্যা করতে হবে, খ. সময়কালের ভিত্তিতে প্রতত্ত্বের শ্রেণিবিভাগ করতে হবে, গ. বাংলাদেশের সমাজ ও সভ্যতার বিকাশে মহাস্থানগড়ের অবদান বর্ণনা করতে হবে, ঘ. বাংলাদেশের সমাজ ও সভ্যতার বিকাশে ময়নামতির অবদান বর্ণনা করতে হবে

ক) প্রত্নতত্ত্বের ধারণা ও এর উৎস ব্যাখ্যা

প্রত্নতত্ত্বের ধারণা

প্রত্নতত্ত্ব জ্ঞানের একটি শাখা হিসেবে এর বিষয়বস্তু ও পদ্ধতি নিয়ে নিজস্ব অস্তিত্ব বজায় রেখে চলেছে। প্রত্নতত্ত্ব হচ্ছে অতীতের লুপ্ত বা ধ্বংসপ্রাপ্ত সংস্কৃতির পাঠ। এটা প্রাগৈতিহাসিক যুগের ঘটনাবলি, জীবনধারণ প্রণালি এবং প্রাচীনকালের মানবসংস্কৃতির পরিবর্তনের প্রক্রিয়াকে সমীক্ষা করতে চায়। লিখিত ইতিহাস সংরক্ষণের পূর্বে মানবসমাজে কী ঘটেছিল তা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে জানতে আগ্রহী।অধ্যাপক ইয়ান হোডার (Ian Hodder)-এর মতে, “প্রত্নতত্ত্ববিদরা যা করেন তাই প্রত্নতত্ত্ব। এর আলোচ্য বিষয় মূলত ইতিহাস বা প্রাক-ইতিহাস। লিখিত দলিলাদির পরিবর্তে নিদর্শনস্বরূপ রয়ে যাওয়া নির্মাণকাঠামোই হলো এর গবেষণাক্ষেত্র।”

ই. বি. টেইলর (E. B. Tylor) বলেন, “প্রত্নতত্ত্ব হচ্ছে অতীতের ধ্বংসাবশেষ সম্পর্কিত পাঠ বা গবেষণা ( Archaeology is the study of remains of the past.)। তিনি আরও বলেন, “প্রত্নতত্ত্ব নৃবিজ্ঞানের এমন একটি শাখা যা এমন সমাজ ও সংস্কৃতির ইতিহাস রচনা করে, যে সমাজের অস্তিত্ব আর নেই (Archaeology is the branch of Anthropology that is concerned with the historical reconstruction of cultures no longer extant.)

ল্যারি জে. জিমারম্যান (Larry J. Zimmerman)- এর সংজ্ঞানুযায়ী, “প্রত্নতত্ত্ব হলো অতীতের জনগণের বিজ্ঞানসম্মত অধ্যয়ন, তাদের সংস্কৃতি ও পরিবেশের সাথে তাদের সম্পর্ক প্রত্নতত্ত্বের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হলো পারিপার্শ্বিক পরিবেশ এবং পরিস্থিতির সাথে মানবজাতি কীভাবে মিথস্ক্রিয়া করত তা অনুধাবন এবং এই ইতিহাসগুলো বর্তমান ও ভবিষ্যৎ অধ্যয়নের জন্য সংরক্ষণ করে রাখা।”

Related Articles

সুতরাং যে বিজ্ঞান অতীত মানুষের বাস্তব বা বস্তুগত সংস্কৃতির ধ্বংসাবশেষ পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও বিশ্লেষণের মাধ্যমে প্রাচীন সমাজ সম্পর্কে জ্ঞানদান করে তাকে প্রত্নতত্ত্ব বলে।

প্রত্নতত্ত্বের সূত্র

প্রত্নতত্ত্বের বিভিন্ন উৎস রয়েছে। এ উৎসগুলো থেকে প্রত্নতত্ত্ব সম্পর্কিত বিভিন্ন তথ্য পাওয়া যায়। নিচে কিছু প্রত্নতাত্ত্বিক উৎস সম্পর্কে ধারণা দেওয়া হলো-

১. প্রত্নতাত্ত্বিকরা লিখিত দলিল-দস্তাবেজকে প্রত্নতত্ত্বের উৎস হিসেবে ব্যবহার করেন। যেমন- মেসোপটেমিয়া, মিশর ও শুয়েতেমালায় প্রাপ্ত নিদর্শনসমূহ ইত্যাদি।

২. পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলে ইউরোপীয়দের আগমনের পূর্বে কোনো লিখিত ভাষার অস্তিত্ব ছিল না। যেহেতু প্রাগৈতিহাসিক যুগের কোনো লিখিত দলিল নেই, সেজন্য প্রত্নতাত্ত্বিকরা মানুষের কর্মকাণ্ডের যেকোনো একটি ক্ষুদ্র অংশ যেমন- হাতিয়ার, যন্ত্রপাতি, মাটির পাত্র, জীবজন্তুর হাড়, লতা-গুল্ম, লোহা, পাথর ইত্যাদির অংশবিশেষ গবেষণার সূত্র হিসেবে ব্যবহার করেন।

৩. প্রত্নতাত্ত্বিকরা জীবজন্তুর হাড়, কাঠ-কয়লা এবং গাছপালার অবশিষ্টাংশ সংরক্ষণ করেন প্রত্নতাত্ত্বিক কাল নিরূপণ করার জন্য এবং পূর্বোক্ত পরিবেশগত অবস্থা যাচাইয়ের জন্য। প্রত্নতাত্ত্বিক কাল নিরূপণের জন্য তেজস্ক্রিয় অঙ্গার কৌশল (Radio carbon dating technique) ও তেজস্ক্রিয় পটাসিয়াম পদ্ধতির সাহায্য নেওয়া হয়।

৪. সাংস্কৃতিক নৃ-বিজ্ঞানী ও দৈহিক নৃ-বিজ্ঞানীর তথ্যাদিও প্রত্নতাত্ত্বিক উৎস হিসেবে বিবেচিত। সাংস্কৃতিক নৃ-বিজ্ঞানীরা যেখানে বর্তমানের জীবিত মানবগোষ্ঠীকে নিয়ে গবেষণায় ব্যাপৃত, সেখানে প্রত্নতাত্ত্বিকগণ অতীতের বিকাশমান মানবসংস্কৃতি এবং মানবের উদ্ভব ও বিকাশ সম্পর্কিত কাহিনি খুঁজে বের করতে চান। ফলে দৈহিক নৃ-বিজ্ঞানের সাথেও এর যোগসাজশ রয়েছে। কারণ জীবাশ্ম নিয়েও প্রত্নতত্ত্বকে গবেষণা করতে হয়। এদিক থেকে প্রত্নতত্ত্ব দৈহিক নৃ-বিজ্ঞান ও সাংস্কৃতিক নৃ-বিজ্ঞানের মধ্যে একটি বিশ্বস্ত সেতুর মতো কাজ করে।

খ) সময়কালের ভিত্তিতে প্রত্নতত্ত্বের শ্রেণিবিভাগ

মানবসমাজের ইতিহাসকে দুই ভাগে ভাগ করা যায়; যথা- প্রস্তর যুগ ও ধাতু যুগ। প্রস্তর যুগ বলতে প্রাগৈতিহাসিক যুগের পাথরের অস্ত্রশস্ত্র এবং তার ব্যবহার ও কলাকৌশলকে বোঝানো হয়। তখন মানুষ ছিল শিকারি ও খাদ্য সংগ্রহকারী। অপরপক্ষে, ধাতুযুগে মানুষ ছিল খাদ্য উৎপাদনকারী। প্রত্নতত্ত্ববিদগণ পাথরের হাতিয়ারের আবিষ্কার, এর প্রয়োগ ও কলাকৌশলের উপর ভিত্তি করে প্রস্তর যুগকে তিনটি বড় বিভাগে বিভক্ত করেছেন। এগুলো হচ্ছে-

১. পুরোপলীয় বা প্রাচীন প্রস্তর যুগ (Paleolithic Age);

২. মধ্য পুরোপলীয় বা মধ্য প্রস্তর যুগ (Middle Paleolithic

৩. নবোপলীয় বা নব্য প্রস্তর যুগ (Neolithic Age);

অনেকে আবার ‘উষা প্রস্তর যুগ’ (Eolithic Age) নামে আরও একটি বিভাগ এর সাথে যুক্ত করেন। প্রত্নতত্ত্ববিদগণ প্রাগৈতিহাসিক কালকে ৫টি ধাপে বা যুগে ভাগ করেছেন। এগুলো হচ্ছে-

ক) প্রাচীন প্রস্তর যুগ (Paleolithic Age)

খ) নব্য প্রস্তর যুগ (Neolithic Age)

গ) তাম্র যুগ (Copper Age)

ঘ) ব্রোঞ্জ যুগ (Bronze Age)

ঙ) লৌহ যুগ (Iron Age)

ভূবিজ্ঞানীগণ পৃথিবীর বয়ঃক্রমকে কয়েকটি মহাযুগে ভাগ করেছেন। পৃথিবীর প্রথম মহাযুগ হচ্ছে আর্কেওজয়িক (Archeozoic)। এ যুগে প্রাণের কোনো স্পন্দন ছিল বলে প্রমাণ পাওয়া যায় না। এর পরবর্তী যুগ প্রটারোজয়িক (Proterozoic) মহাযুগ এ যুগে ভূপৃষ্ঠে অমেরুদণ্ডী প্রাণী সৃষ্টি হয়। এরপর প্যালেওজয়িক (Paleozoic) মহাযুগ এ যুগে পৃথিবীতে মেরুদণ্ডী মৎস্যজাতীয় প্রাণী ও উভচর প্রাণীর আবির্ভাব ঘটে। পরবর্তী মহাযুগ মেসোজয়িক (Mesozoic)। এ যুগ সরীসৃপের যুগ। এরপর পৃথিবীর অধুনাতম মহাযুগ সেনোজয়িক (Cenozoic)। এ মহাযুগ এখনো চলছে। ভূবিজ্ঞানে এ যুগকে দু’ভাগে ভাগ করা হয়।

  • টারশিয়ারি (Tertiary) ও
  • কোয়াটারনারি (Quaternary)।

ভূপৃষ্ঠে মানুষের আবির্ভাব ঘটে কোয়াটারনারি ভাগে। কোয়াটারনারিকে দুটি যুগে বিভক্ত করা হয়েছে:

  • প্লাইস্টোসিন (Pleistocene) ও
  • হলোসিন (Holocene)।

এ যুগের ব্যাপ্তি আনুমানিক নয় লক্ষ পঁচাত্তর হাজার বছর মাত্র প্লাইস্টোসিন যুগে মানুষের প্রথম দর্শন মেলে। এ যুগের মানুষেরা হচ্ছে পিথিক্যানথ্রোপাস (Pithecanthropus) বা পিকিং মানুষ এবং ইউরোপ ও এশিয়ার বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে নিয়ানডারথাল মানুষের বাস ছিল। প্লাইস্টোসিন যুগের মানুষ কালক্রমে নিশ্চিহ্ন হয়ে যায় এবং তার স্থান দখল করে হোমো স্যাপিয়েন্স (Homo Sapiens) বা আধুনিক মানুষ। হোমো স্যাপিয়েন্স যুগের নাম হলোসিন প্লাইস্টোসিন যুগের হাতিয়ার হচ্ছে নিম্নমানের। প্রত্নতাত্ত্বিকগণ এ নিম্নমানের পাথরের হাতিয়ারের যুগকে নাম দিয়েছেন প্রাচীন প্রস্তর যুগ। এ যুগের হাতিয়ার হচ্ছে পাথরের তৈরি, যা ধাতুর চেয়ে নিকৃষ্ট।

প্লাইস্টোসিন যুগের শেষ ভাগে কিংবা হলোসিন যুগের প্রারম্ভে হাতিয়ার তৈরির কৌশলের উন্নতি হয়। প্রত্নতত্ত্ববিদগণ উন্নত মানের পাথরের হাতিয়ারের ব্যবহারকে নব্য প্রস্তর যুগ বলেছেন। অনুমান করা হয় ১০,০০০ বছর পূর্বে এ যুগের সূচনা হয়। এ যুগে মানুষ পশুপালন ও কৃষিকাজ আবিষ্কার করে এবং সভ্যতার সূত্রপাত হয়।

ধাতুযুগে প্রাচ্যে সর্বপ্রথম ধাতুর ব্যবহার শুরু হয়। খ্রিষ্টপূর্ব ৪০০০ থেকে ৩০০০ অব্দের মধ্যে নিকট প্রাচ্যে ব্রোঞ্জের তৈরি হাতিয়ার ব্যবহার হতে দেখা যায়। প্রত্নতত্ত্ববিদগণ ব্রোঞ্জের হাতিয়ারের যুগকে ব্রোঞ্জ যুগ বলেছেন। প্রত্নতত্ত্ববিদগণ লোহার হাতিয়ারের যুগকে বলেছেন লৌহ যুগ। খ্রিষ্টপূর্ব ১৫০০ অব্দে লৌহের ব্যবহার শুরু হয়।

নিচে সময়কাল অনুযায়ী প্রত্নতাত্ত্বিক যুগের একটি তালিকা দেওয়া হলো-

গ) বাংলাদেশের সমাজ ও সভ্যতার বিকাশে মহাস্থানগড়ের অবদান

মহাস্থানগড় (Mohasthangorh) বগুড়া শহর থেকে প্রায় ১৮ কিলোমিটার উত্তরে করতোয়া নদীর তীরে গড়ে ওঠে মহাস্থানগড়। মহাস্থানগড়কে প্রাচীন পুণ্ড্রনগর বলা হয়। করতোয়া নদীর বাম তীরে প্রায় ৭৮ বর্গকিলোমিটার অঞ্চলজুড়ে মহাস্থানগড়ের ধ্বংসাবশেষের বিস্তৃতি। চীনা পরিব্রাজক হিউয়েন সাং-এর বর্ণনা অনুযায়ী এবং অশোকের সময়ে একটি শিলালিপি থেকে এ স্থানের নাম পুণ্ড্রনগর বলে জানা যায়। প্রাচীনকালে পুণ্ড্র’ একটি জাতির নাম ছিল। এ জাতি উত্তরবঙ্গে বাস করত বলে এ অঞ্চল ‘পুণ্ড্রদেশ’ এবং এর রাজধানী ‘পুণ্ড্রবর্ধন’ বা ‘পুণ্ড্রনগর’ নামে পরিচিত ছিল। সপ্তম শতকে হিউয়েন সাংয়ের বর্ণনার ভিত্তিতে আলেকজান্ডার কানিংহাম এ জায়গাকে ‘পুণ্ড্রবর্ধন’ বলে শনাক্ত করে।

১৯৩০ সালে আবিষ্কৃত ব্রাহ্মী অক্ষরে বাংলার প্রাচীনতম শিলালিপি থেকে প্রমাণিত হয় যে, মহাস্থানগড়ই ছিল প্রাচীন পুণ্ড্রনগর। বিভিন্ন ঐতিহাসিক সময়ে মহাস্থানগড় কয়েক শতক পর্যন্ত মৌর্য, গুপ্ত, পাল ও অন্য হিন্দু সামন্ত রাজাদের রাজধানী ছিল। চারদিকে উঁচু প্রাচীর ঘেরা উত্তর-দক্ষিণে দীর্ঘ এই দুর্গ নগরীর আয়তন ৫,০০০ x 8,৫০০ ফুট। চারপাশের সমতল ভূমি থেকে এর উচ্চতা প্রায় ১৫ ফুট। নগরীর বাইরে ৫ মাইল এলাকা শহরতলি ছিল বলে মনে করা হয়। মহাস্থানগড় বাংলাদেশের প্রধানত বৌদ্ধ সভ্যতার প্রাচীনতম ধ্বংসাবশেষ।

মহাস্থানগড়ের সামাজিক-ঐতিহাসিক গুরুত্ব (Socio-Historical Significance of Mohasthangorh)

মহাস্থানগড়ের ধ্বংসাবশেষ বাংলাদেশের সামাজিক ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হতে পারে- এতে কোনো সন্দেহের অবকাশ নেই। তবে এলাকাটিতে পরিকল্পিতভাবে খননকাজ পরিচালনা করা হয়নি। আবার উদ্ধারকৃত ধ্বংসাবেশেষের সবগুলোর সঠিক ও বিস্তারিত পাঠোদ্ধার করা হয়েছে বলেও মনে হয় না। কেননা, প্রায়ই অনুমান এবং লোককাহিনির সাহায্যে ঐ সব ধ্বংসাবশেষের ব্যাখ্যা দেওয়ার প্রয়াস রয়েছে। তবু মহাস্থানগড় সম্পর্কে যেসব বর্ণনা লিপিবদ্ধ রয়েছে তাতে ধারণা করা হয় যে ঐ এলাকায় বৌদ্ধ ও হিন্দু সমাজ ও সংস্কৃতির প্রভাব ছিল। কেননা, মহাস্থানগড়ের ধ্বংসাবশেষ দেখে অনেকেই সেখানে কতিপয় বৌদ্ধ ও হিন্দু মন্দিরের সন্ধান পেয়েছেন।

এলাকাটি পরবর্তী সময়ে এ অঞ্চলে আগত মুসলমানদের দখলে চলে যায় এবং হিন্দু-বৌদ্ধ সংস্কৃতির স্থলে মুসলিম সংস্কৃতির গোড়াপত্তন হয়। কেননা স্থানীয় একটি লোককথা হচ্ছে যে, এখানকার শেষ হিন্দু নরপতি পরশুরাম মুসলমান বিজেতা দ্বারা পরাস্ত হন। শাহ সুলতান মাহীসওয়ার নামক এক মুসলিম দরবেশের মাজারও মহাস্থানগড়ে আবিষ্কৃত হয়েছে। অতএব ঐ মুসলিম দরবেশ দ্বারা মহাস্থান বিজয় এবং পরবর্তীকালে সেখানে মুসলিম সংস্কৃতির প্রসার ঘটার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। এই অনুমিত ঘটনা ছাড়া মহাস্থানগড়ের সমাজ ও সভ্যতার লয়প্রাপ্তির অন্য কোনো কারণ আছে কি না তা স্পষ্টভাবে বলা যায় না।

ঘ) বাংলাদেশের সমাজ ও সভ্যতার বিকাশে ময়নামতির অবদান

প্রাচীন বাংলার সমতট অঞ্চলের বৌদ্ধ সভ্যতার অন্যতম প্রত্নতাত্ত্বিক ধ্বংসাবশেষ কুমিল্লার ময়নামতি কুমিল্লার ময়নামতি বাংলাদেশে বৌদ্ধধর্ম ও সভ্যতার অন্যতম প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন। কুমিল্লা শহর থেকে প্রায় ৮ কি. মি. দক্ষিণ-পশ্চিমে ময়নামতি অবস্থিত। সেখানে মাইলব্যাপী ময়নামতি লালমাই পাহাড়ের মধ্যবর্তী স্থানে বাংলাদেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন আবিষ্কৃত হয়েছে। খ্রিষ্টীয় অষ্টম থেকে দ্বাদশ শতাব্দী পর্যন্ত চিত্র ময়নামতি এ অঞ্চলে বৌদ্ধ সভ্যতার বিকাশ ঘটে। ১৯৫৫ সালে প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ এখানে প্রত্নতাত্ত্বিক খননকার্য শুরু করে। প্রাচীন কীর্তির ধ্বংসাবশেষ বহনকারী ময়নামতিতে প্রায় ৫৪টি প্রত্নতত্ত্ব নিদর্শন সংরক্ষিত আছে। এখানকার পাহাড়গুলোর গড় উচ্চতা ৩০ ফুট। ময়নামতিতে অবশ্য কয়েকটি ১০০ ফুটের উচ্চ চূড়াও রয়েছে।

ময়নামতির সামাজিক-ঐতিহাসিক গুরুত্ব (Socio-Historical Significance of Mainamati)

বাংলায় বৌদ্ধ সভ্যতা পতনের কোনো সুস্পষ্ট কারণ জানা যায়নি। তবে অনুমান করা হয়, ব্রাহ্মণ ধর্মের পুনর্জাগরণের সময় এই বৌদ্ধ সভ্যতা রাজকীয় পৃষ্ঠপোষকতা হারিয়ে ধীরে ধীরে ধ্বংসের দিকে এগিয়ে যায় এবং জনশূন্য হয়ে পরিণামে এক বিরাট ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়। সমাজ ইতিহাস রচনায় ময়নামতির প্রত্নতাত্ত্বিক ঐশ্বর্য বিশেষ অবদান রাখছে। বাংলাদেশের ময়নামতি অঞ্চলে বৌদ্ধ সভ্যতার এক স্বর্ণযুগ কেটেছে। এ সভ্যতার যুগে সমাজ ও সংস্কৃতি ছিল প্রধানত ধর্মভিত্তিক। কেননা, ধ্বংসাবশেষ থেকে মন্দির ও বিহারই আবিষ্কৃত হয়েছে। মুদ্রা আবিষ্কার হওয়ায় ধারণা করা হচ্ছে যে, ক্রয়-বিক্রয়ে মুদ্রা ব্যবহার হতো। তখন থেকে সমাজে মুদ্রা অর্থনীতির প্রচলন শুরু হয়। এ সভ্যতায় রাজার ভূমি দান করার ক্ষমতা থাকায় প্রমাণ হয় যে, তখন ভূমিতে ব্যক্তিগত মালিকানা ছিল। ভূমিতে ব্যক্তিগত মালিকানা ও মুদ্রার প্রচলন থাকায় সামাজিক অসমতার অস্তিত্ব ছিল বলে মনে করা হয়।

Related Articles

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

Back to top button