নারী শক্তি হচ্ছে পৃথিবীর অন্যতম এক শক্তি। যে শক্তি ছাড়া পৃথিবী অচল। ১ বছরে ৩৬৫ দিন আর তার মধ্যে একটি মাত্র দিন হচ্ছে নারী দিবস। আমরা সকলেই জানি যে ৮ই মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবস, আর এই দিবস শুধু মাত্র বাংলাদেশ পালন করা হয় না, বিশ্বজুড়ে পালন করা হয়।
তাই প্রতি বছর মার্চ মাস আসলেই বিশ্বজুড়ে নারী দিবসকে ঘিরে অনেক আয়োজন করা হয়। কিন্তু আমরা কি জানি আন্তর্জাতিক নারী দিবস কবে? এবং কেন পালন করা হয়? আপনারা যদি এটি না জানেন তাহলে একদম সঠিক স্থানে এসেছেন আমরা আপনাদের বিশ্ব নারী দিবস সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানাবো।
আর্ন্তজাতিক নারী দিবস ২০২৪
আমরা সকলেই আন্তর্জাতিক নারী দিবস সম্পর্কে কমবেশি জানি। কিন্তু আন্তর্জাতিক নারী দিবসের অনেক খুঁটিনাটি আমরা এখনো জানিনা। আর তাই আমরা আপনাদের জন্য আন্তর্জাতিক নারী দিবস সম্পর্কিত কিছু তথ্য নিয়ে হাজির হয়েছি।
আন্তর্জাতিক নারী দিবসের পূর্বনাম ছিল আন্তর্জাতিক কর্মজীবী নারী দিবস। আন্তর্জাতিক নারী দিবস পালন করা হয়প্রত্যেক মার্চ মাসের ৮ তারিখে। আর এই দিবসটি পালন করে বিশ্বব্যাপী।
এই দিবসটি পালন করার পেছনে রয়েছে নারী শ্রমিকের অধিকার আদায়ের কঠোর সংগ্রাম। তৎকালীন সময়ে নারীদের দিয়ে ব্যাপক কাজ করে নেয়া হতো কিন্তু নারীদের পর্যাপ্ত পরিমাণে পারিশ্রমিক দেয়া হতো না বরং অত্যাচার করা হতো। আর সেই সকল এবং নির্মম অত্যাচারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াও এবং তাদের অধিকার আদায় সঙ্গবদ্ধ হয়।
আর ঠিক তখনই তারা একসাথে সঙ্গবদ্ধ হয়ে তাদের অধিকার আদায়ের জন্য রাজপথে নেমে যায় এবং এক পর্যায়ে এই দিনটিকে নারী দিবস হিসেবে ঘোষণা করা হয়। তৎকালীন সময় থেকে বর্তমান পর্যন্ত নারীদের অধিকার আদায়ের জন্য ৮ই মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবস হিসেবে পালন করা হয়।
আরো দেখুন:
- আন্তর্জাতিক নারী দিবসের ছবি, পোস্টার, ব্যানার, পিকচার, প্রোফাইল পিক
- আন্তর্জাতিক নারী দিবসের উক্তি, বক্তব্য, কিছু কথা, স্লোগান, কবিতা
- আন্তর্জাতিক নারী দিবসের শুভেচ্ছা, স্ট্যাটাস, উক্তি, মেসেজ, ছবি
- আন্তর্জাতিক নারী দিবসের ফেসবুক স্ট্যাটাস, টিকটক, ইন্সটাগ্রামের স্ট্যাটাস।
আন্তর্জাতিক নারী দিবস কবে
আন্তর্জাতিক নারী দিবস কবে? আমরা যারা এখনো আন্তর্জাতিক নারী দিবস কবে জানি না তাদের জন্য আমরা আন্তর্জাতিক নারী দিবস কবে পালন করা হয় তা জানিয়ে দিচ্ছি-
নারীর অধিকার আদায়কে কেন্দ্র করে আন্তর্জাতিক নারী দিবস পালন করা হয়। আর আন্তর্জাতিক নারী দিবস স্বীকৃতি পায় হাজার ১৯৭৫ খ্রিস্টাব্দে ৮ই মার্চ। সেই সময় থেকে বর্তমান পর্যন্ত ৮ই মার্চ নারী দিবস হিসেবে পালন করা হয়।
আন্তর্জাতিক নারী দিবসের ইতিহাস
আন্তর্জাতিক নারী দিবস শুরু হওয়ার অনেক ইতিহাস রয়েছে। কালক্রমে ভিন্ন ভিন্ন দেশে ভিন্ন ভিন্ন প্রতিবাদের ফলে আজকের এই নারী দিবস পালিত হয়। প্রথমে নারীর অধিকার আদায়ের সংগ্রাম এর জন্য ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দে নারীদের প্রতি অমানবিক পরিশ্রম এবং অমানবিক পরিবেশে বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের রাস্তায় নেমেছিলেন বস্ত্র বিতান কারখানার নারী শ্রমিকরা।
এরপর সর্বপ্রথম ১৯০৯ খ্রিস্টাব্দে ২৮শে ফেব্রুয়ারি নারী সংগঠনের পক্ষ থেকে আয়োজিত সমাবেশ জার্মান সমাজতান্ত্রিক নেত্রীর নেতৃত্বে আন্তর্জাতিক নারী সম্মেলন করা হয়। তৎকালীন সময়ে জার্মান নেত্রী ক্লারা জেটকিন ছিলেন জার্মান রাজনীতিবিদ এবং তিনি জার্মান কমিউনিস্ট একজন সদস্য ছিলেন।
দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক নারী সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় ১৯১০ খ্রিস্টাব্দে ডেনমার্কের কোপেনহেগেনে। সেই সময়ে 17 টি দেশ থেকে 100 জন নারী প্রতিনিধি যোগ দিয়েছেন এই নারী দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক সম্মেলনে। এরপর এই সম্মেলনে তারা প্রতি বছর ৮ই মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবস হিসেবে পালন করার জন্য প্রস্তাব দিয়েছেন। তখন সেই প্রস্তাবে ১৯১১ খ্রিস্টাব্দ থেকে নারীদের অধিকার হিসেবে দিনটি পালিত হবে বলে গণ্য করা হয়।
সিদ্ধান্ত গ্রহণের সাথে সাথে বিভিন্ন দেশের সমাজতন্ত্রীরা এ দিবসটি পালনে এগিয়ে আসেন। এরপর ১৯১৪ খ্রিস্টাব্দ থেকে বেশ কয়েকটি দেশে 8 মার্চ নারী দিবস হিসেবে পালন করা হত। কিন্তু বাংলাদেশে ১৯৭১ সালে স্বাধীনতার পূর্বে থেকে এ দিবসটি পালন করা হতো। সেই সময়ে পূর্ব পাকিস্তান বর্তমান বাংলাদেশে এই দিবসটি পালন করে ছিল।
তবে ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ হওয়ার কারণে অনেক কিছু ওলট-পালট হয়ে গেল। এরপর ১৯৭৫ সালে ৮ই মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবস হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করেছে বাংলাদেশ।
সুতরাং পর্যায়ক্রমে নারীদের অধিকার এবং নারীদের সমাজের স্বীকৃতি পাওয়ার লক্ষ্যে দফায় দফায় দাবি আদায় বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করা হয় এবং সেই দাবি স্বীকৃতি পেয়ে বর্তমানে ৮ই মার্চ আন্তর্জাতিক ভাবে বিশ্ব নারী দিবস পালন করা হয়।
আন্তর্জাতিক নারী দিবস কেন পালন করা হয়
আমরা অনেকেই জানি না আন্তর্জাতিক নারী দিবস কেন পালন করা হয়? আন্তর্জাতিক নারী দিবস পালন করার মূল লক্ষ্য হচ্ছে নারীদের অধিকার এবং নারী সম্পর্কে সমাজকে সচেতন করা। সমাজের সকল স্তরের নারীদের সাফল্য এবং নারীদের পরিশ্রমের জয়গান গাওয়া হচ্ছে নারী দিবস।
এক সময় ছিল নারীদের দিয়ে অবিরাম কাজ করে নেয়া হতো এবং নারীদেরকে সমাজে কোনো মর্যাদা দেয়া হতো না। কিন্তু বর্তমানে এখন তা নেই। নারীরা তাদের পরিশ্রমের পারিশ্রমিক পেয়ে থাকে এবং সমাজে নারীদের কাজের অগ্রাধিকার দেয়া হয় এর পাশাপাশি নারীদের সাফল্যের জন্য নারীদের বিভিন্ন ভাবে উৎসাহিত এবং অ্যাওয়ার্ড দেওয়া হয়।
আন্তর্জাতিক নারী দিবস পালন করার মূল কারণ হচ্ছে নারীর অধিকার রক্ষা করা এবং নারীদে সম্পর্কে সমাজের সচেতন করে তোলা।
তাছাড়া বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন অঞ্চলে নারীদের প্রতি শ্রদ্ধা, এবং নারীদের কাজের প্রশংসা প্রকাশ করার জন্য আন্তর্জাতিকভাবে নারী দিবস পালন করা হয় যা নারীদেরকে অর্থনৈতিক রাজনৈতিক ও সামাজিকভাবে সাফল্য অর্জনে সহায়তা করে।
প্রথম ১৯০৯ সালে আন্তর্জাতিক নারী দিবস পালন করা হয়েছে। কিন্তু একই বছর 28 ফেব্রুয়ারি তে আমেরিকায় নারী দিবস উদযাপন করা হয়। কিন্তু সোশালিস্ট পর্টি অফ আমেরিকা নিওস শ্রমিকরা তাদের কাজের সম্মান আদায়ের জন্য ধর্মঘট শুরু করেন এবং নির্দিষ্ট সময়ে বেতনের দাবি করেন।
নারীদের এ দাবি একসময় বিশ্বব্যাপী নারীদের দাবি আদায়ের প্রতিবাদ জানানো হয়। আর তখন জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ সদস্য রাষ্ট্র ওদের নারী অধিকার ও বিশ্ব শান্তি রক্ষার উদ্দেশ্যে জাতিসংঘ নারী দিবস ৮ই মার্চ হিসেবে ঘোষণা করেন।
FAQ
১. আন্তর্জাতিক নারী দিবস কবে?
উত্তরঃ ৮ই মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবস।
২. আন্তর্জাতিক নারী দিবস কেন পালন করা হয়?
উত্তরঃ নারীর অধিকার রক্ষা এবং সমাজে নারীর স্বীকৃতি।
৩. প্রথম আন্তর্জাতিক নারী দিবস কবে পালন করা হয়?
উত্তরঃ ১৯০৯ খ্রিস্টাব্দে প্রথম আন্তর্জাতিক নারী দিবস পালন করা হয়।
৪. বাংলাদেশ কত সালে আন্তর্জাতিক নারী দিবস স্বীকৃতি পায়?
উত্তরঃ বাংলাদেশ ১৯৭৫ সালে আন্তর্জাতিক নারী দিবস স্বীকৃতি পায়।
৫. আন্তর্জাতিক নারী দিবস এর পূর্ব নাম কি ছিল?
উত্তরঃ আন্তর্জাতিক নারী দিবস এর পূর্ব নাম ছিল আন্তর্জাতিক কর্মজীবী নারী দিবস।
আশা করছি আপনারা আমাদের এই আর্টিকেল থেকে আন্তর্জাতিক নারী দিবস সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানতে পেরেছেন এবং নারী দিবস কেন বিশ্বজুড়ে সকল নাগরিক পালন করেন তার উদ্দেশ্য জানতে পেরেছেন। এছাড়াও আপনারা জানতে পেরেছেন আন্তর্জাতিক নারী দিবস কবে পালন করা হয়। আপনারা যদি নারী দিবস সম্পর্কিত আরো অন্যান্য তথ্য জানতে চান তাহলে আমাদের কমেন্ট করে জানাতে। ধন্যবাদ।