কোরবানির গোশত/মাংস বন্টন করার উত্তম / সঠিক নিয়ম (ভিডিওসহ)

ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা ঈদুল আযহার সময় মহান আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য কুরবানী দিয়ে থাকেন। কিন্তু পশু কোরবানির গোশত বন্টন করার নির্দিষ্ট নিয়ম রয়েছে। ইসলামিক বিধান অনুসারে সেই কুরবানীর গোশত বন্টন করতে হয়। তাই আপনারা যারা কুরবানীর গোশত বন্টন করার উত্তম পদ্ধতি কি? জানেন না তাদের জন্য আমরা সেই উত্তম পদ্ধতি জানাতে এসেছি।
কোরবানি দেয়া একটি ধর্মীয় রীতি। আর এই রীতি সঠিকভাবে পালন করা হচ্ছে কিনা তা তদারকি করা একজন মুসলমান হিসেবে অবশ্যই তার কর্তব্য। কারণ আমরা আমাদের নিশা পরিমাণ সম্পদ অনুসারে মহান আল্লাহতালার আনুগত্য এবং সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য কোরবানি দিয়ে থাকি। সুতরাং আপনারা যারা কোরবানির গোশত বন্টনের পদ্ধতি জানেন না তারা আমাদের সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ে জেনে নিতে পারবেন। চলুন তাহলে জেনে নেয়া যাক।
কোরবানির গোশত বন্টন করার উত্তম পদ্ধতি
ঈদুল আযহার দিন পশু কুরবানী দেয়ার ফলে অন্তর পরিশুদ্ধ হয় এবং মহান আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টি অর্জন করা হয়। এটি হচ্ছে কুরবানীর মূল প্রেরণা। ঈদুল আযহার দিন ঈদের নামায আদায়ের পর পশু কোরবানির দোয়া হয়ে গেলে দায়িত্ব শেষ হয়ে যায় না। আমরা যে কারণে পশু কোরবানি দিয়ে থাকি সেই পশুর গোশত সম্পূর্ণ ইসলামিক রীতি অনুসারে সকলের মাঝে বন্টন করে দিতে হয়। কুরবানীর গোশত বন্টন করা না হয় তাহলে সেই কোরবানির কবুলের শর্ত পূরণ হবে না। এতে করে অবশ্যই আমাদেরকে কুরবানীর গোস্ত বন্টনের ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে এবং উত্তম পদ্ধতিতে কুরবানীর গোশত বন্টন করতে হবে।
কুরবানীর গোশত বন্টন করার ক্ষেত্রে হযরত মুহাম্মদ সাঃ যা করতেন তা হচ্ছে- কোরবানির গোশত তিন ভাগে ভাগ করে নিতে এবং সেখান থেকে এক ভাগ গরিবদের মধ্যে ভাগ করে দিতেন, আরেক আত্মীয়স্বজনদের মধ্যে ভাগ করে দিতেন এবং সেইসাথে হাদিয়া দিতেন। এবং অন্যটি রয়েছে সেই ভাগটি নিজের জন্য রাখতেন। আর সেই অনুসারে কোরবানির গোশত তিন ভাগে ভাগ করা উত্তম বলে গণ্য করা হয় কিন্তু কুরবানীর গোস্ত বন্টনের ক্ষেত্রে এটি শর্ত নয়।
কোরবানির মাংস বন্টন করার সঠিক নিয়ম
কুরবানীর গোশত বন্টন করার নিয়ম হচ্ছে-
- যে ব্যক্তি কোরবানি দিবে সে ব্যক্তি নিজে খাবারের জন্য কুরবানীর গোশত রাখবেন এবং অন্যদেরকে খাওয়াতে পারবেন।
- কুরবানীর গোশত তিন ভাগে ভাগ করে নিতে হবে – তবে এটি শর্ত নয়, উত্তম।
- যদি আপনি চান তাহলে সম্পূর্ণ গোশত সদকা করে দিতে পারবেন।
- কোরবানির গোশত অবশ্যই এক-তৃতীয়াংশ গরীবদের মাঝে সদকা করে দিতে হবে। তবে এটি শর্ত নয়, উত্তম।
- কোরবানির গোশত কোনভাবে বিক্রি করা যাবে না।
- কোরবানির গোশত ইচ্ছা অনুসারে প্রতিবেশী এবং আত্মীয়-স্বজনদের মাঝে ভাগ করে দিতে পারবে।
- যেসকল ব্যক্তিবর্গ জবাই করবে তাদেরকে কোরবানির গোশত ধারা মজুরি প্রদান করা যাবে না।
- কুরবানি দেয়ার জন্য একটি পশুর যদি একাধিক ব্যক্তি মিলে দিয়ে থাকে সে ক্ষেত্রে অবশ্যই বন্টন করার জন্য সমতা বজায় রাখতে হবে।
- অনুমানের উপর ভিত্তি করে কোরবানির গোশত বন্টন করা বৈধ নয়, তাই অবশ্যই ওজনের উপর ভিত্তি করে বন্টন করতে হবে।
- নিজের ইচ্ছেমতো কোরবানির গোশত কমবেশি করে বন্টন করা যাবে না এতে করে কোরবানি বাতিল হয়ে যাবে।
- কোরবানির গোশত সাথে হাড়-চামড়া যুক্ত থাকলে সে ক্ষেত্রে অবশ্যই বৈধ উপায়ে বন্টন করতে হবে।
- উত্তম পদ্ধতিতে কোরবানির গোশত তিন ভাগে ভাগ করে দেয়া উচিত। কারণ এটি হলো মুস্তাহাব।
- অভিভাবকের পক্ষ হতে যদি কোন শিশুর সম্পত্তির ওপর কোরবানি দেয়া হয় তাহলে ওই কোরবানিকৃত প্রাণীর গোশত শুধুমাত্র ওই শিশু খেতে পারবে। কোন ভাবে পরিবারের অন্য সদস্য খেতে পারবে না। তাই প্রয়োজন অনুসারে অবশ্যই এমন কিছু বিনিময় করতে হবে যাতে করে শিশুর সরাসরি উপকার হয়।
সুতরাং আপনারা যখন কোরবানি দিবেন এবং কুরবানীর গোস্ত বন্টনের ক্ষেত্রে অবশ্যই এসকল নিয়মগুলো অনুসরণ করতে হবে। তবে আপনাদের মধ্যে যদি অনিচ্ছাকৃত ভাবে কোন ভুল হয়ে যায় তাহলে সেটি অবৈধ ভাবার কোন কারণ নেই।
আপনারা যারা কোরবানি দিচ্ছেন তারা আশা করছে কোরবানির গোশত বন্টন করার উত্তম পদ্ধতি কি? জানতে পেরেছেন। তবে আপনারা অবশ্যই কুরবানী দেয়ার পূর্বে কোরবানির সকল শর্ত সমূহ ইসলামিক শরীয়ত নীতি অনুসারে জেনে নিয়ে কোরবানি দিতে হবে।আপনারা যদি আমাদের পক্ষ হতে কোরবানি সম্পর্কে তো অথবা ইসলামিক অন্যান্য বিষয় সম্পর্কিত জানতে চান তাহলে অবশ্যই আমাদেরকে কমেন্টের মাধ্যমে জানাতে পারেন। জাযাকাল্লাহ খাইরান।